ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা চায় এস আলম গ্রুপ

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে আর্থিক, আইন ও সামাজিক সহায়তা চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে (বিএফআইইউ) দেওয়া এক চিঠিতে এই সহায়তা চেয়েছে তারা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার পাশাপাশি এই গোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এস আলম গ্রুপ লেনদেন করতে পারছে না এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির যেসব হিসাব ছিল, সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে বলে কর্মীদের সময়মতো বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। তাতে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির চিঠিতে বলা হয়, লেনদেন স্থগিত হওয়ায় এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধ করতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মতো পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের পক্ষে সরকারের কর, ভ্যাট ও কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এস আলম গ্রুপের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এলসি বা ঋণপত্র জোরপূর্বক বাতিল করা হচ্ছে। এর মধ্যে খাদ্য ও সহায়ক অন্যান্য পণ্যের এলসিও আছে। এস আলম গ্রুপ মনে করছে, এর ফলে দেশে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের সংকট হতে পারে।

আরও পড়ুন

চিঠিতে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির বেচাবিক্রি কমে যাচ্ছে। পরিণামে ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অনেক শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই বিষয়টি তারা বিশেষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এনেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে, তাদের অন্যতম ছিল এস আলম গ্রুপ। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবার গত এক দশকে ব্যাংক দখলসহ নানা ধরনের আর্থিক অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে অর্থ বের করে তা পাচার করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া চিঠির বিষয়ে এস আলম গ্রুপের বক্তব্য জানতে গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক হোসেন মো. দেলোয়ারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। তবে তিনি বলেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে যে দুই লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি। এই টাকা ফেরত দিতে তাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, তা–ও জানায়নি। যে ব্যাংকগুলো থেকে তারা টাকা নিয়েছে, তারাও এস আলম গ্রুপের কর্ণধারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে এই চিঠির গ্রহণযোগ্যতা নেই।