এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের অর্থনীতিতে উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে: এমসিসিআই
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত আমদানিতে সীমাবদ্ধতা থাকায় বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি কমেছে। আমদানি কমার সঙ্গে রপ্তানিও কমেছে।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ তিন মাস এপ্রিল-জুনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে। এ সময়ে, বিশেষ করে জুনে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ কমেছে। এই ঘাটতির পরিমাণ এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৬ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬২০ কোটি ডলার, যা আলোচ্য অর্থবছরে ২০ দশমিক ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। মূলত এই সময় বাংলাদেশের আমদানি কমে যাওয়ায় ঘাটতি কমেছে। এ সময় আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৭৫৭ কোটি ডলার; আগের বছরের একই সময় ব্যয় হয়েছিল ৬৫ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে কথাগুলো বলা হয়েছে। এতে দেশের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত আমদানিতে সীমাবদ্ধতা থাকায় দেশের বাণিজ্যঘাটতি কমেছে। আমদানি কমার সঙ্গে রপ্তানিও কমেছে। আলোচ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে দেশের রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে ৩৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ৩ হাজার ৭৩৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৩৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৯৬৯ কোটি ডলার।
সেই সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতিও কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন বা ৫৯৮ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি হয়েছিল ১২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০২ কোটি ডলার।
এমসিসিআই বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট বা মূলধনি হিসাবের স্থিতি বেড়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩২০ মিলিয়ন বা ৩২ কোটি ডলার; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ছিল ৩৫৯ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
তবে আর্থিক হিসাবের স্থিতি কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এই হিসাবের স্থিতি ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন বা ২০৮ কোটি ডলার; আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৫ দশমিক ৫২ বিলিয়ন বা ৫৫২ কোটি ডলার।
আর্থিক হিসাবের স্থিতি কমে যাওয়ার কারণ হলো, আলোচ্য সময়ে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে যাওয়া। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে দেশে মোট এফডিআই ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৩৮১ কোটি ডলারে নেমেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন বা ৪০৮ কোটি ডলার।
এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিট হিসাবে আলোচ্য সময়ে দেশে এফডিআই বেড়েছে। এই হিসাবে দেশে এফডিআই বেড়েছে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এই সময়ে নিট এফডিআই এসেছে ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন বা ১৫৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট বা স্টক ও বন্ডে যত বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগকারীরা তুলে নিয়েছেন। এই অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট ছিল মাইনাস ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার; আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল মাইনাস ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেশের বিভিন্ন হিসাবের ঘাটতি অনেকটা কমেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন বা ৮৮০ কোটি ডলার, যা ২০২৪ সালের মে মাসে কমে ৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ৫৮৮ কোটি ডলারে নেমেছে। এর অর্থ হলো, দেশের আমদানি ব্যয় কমেছে এবং প্রবাসী আয় ও বিদেশি সহায়তা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থাপনাও উন্নত হয়েছে। কিন্তু এই ঘাটতি থাকার অর্থ হলো, একটি দেশ যে পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা আয় করছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করছে।
এদিকে ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। এক মাসের বেশি সময়ের আন্দোলনের জেরে ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। জুলাইজুড়ে আন্দোলনের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর এখনো অর্থনীতিতে পুরোপুরি স্থিতিশীলতা আসেনি।
এই বাস্তবতায় এমসিসিআই মনে করছে, এখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে লজিস্টিক ও ব্যাংকিং সেবা জোরদার ও শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। এ ছাড়া এই সরকারকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি চাহিদা কমে যাওয়া, রাজস্বঘাটতি ও সরকারি ব্যয় হ্রাসের মতো বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। বেকারত্ব ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।