এসির উপকরণে আগের শুল্কহারই চান ব্যবসায়ীরা

কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপকরণে আগের শুল্কহার বহাল রাখার দাবিতে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ব্রামাছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কেন্দ্রীয় শীতাতাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপকরণে শুল্ক অনেকটা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবটি কার্যকর হলে ব্যয় বাড়বে এবং এই খাতের বিকাশ ব্যাহত হবে; সার্বিকভাবে দেশে বিদ্যুতের অপচয় বাড়বে এবং ভোক্তাদের ওপর খরচের চাপ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে এই খাতের শিল্প হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও বিনষ্ট হবে। সে জন্য আগের শুল্কহার বজায় রাখা দরকার।

বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ব্রামা) গতকাল বুধবার বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে। রাজধানীর পুরানা পল্টনের ফার্স হোটেলে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ব্রামার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সহসভাপতি মো. আকরাম হোসেন, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হোসেন, উপদেষ্টা এম এ সাঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ব্রামার সভাপতি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (ভিআরভি/ভিআরএফ) ব্যবস্থায় শুল্কায়নের জন্য এইচএস কোড বদলানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুল্কায়নের হার ১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে শুল্কহার প্রায় ৪৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।

নতুন বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এয়ারকন্ডিশনার (এসি) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন অনুসারে রেয়াতি হারে কম্প্রেসর আমদানি করতে পারে। কিন্তু এসি স্বল্প আয়ের মানুষ ব্যবহার করেন না। সে জন্য এর আমদানি শুল্কে রেয়াতি হার প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজনীয় উপকরণ কম্প্রেসর দেশে উৎপাদিত হয় বলে এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন থেকে কম্প্রেসর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বাজেটে প্রস্তাবিত শুল্কহার বাস্তবায়িত হলে এই খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে। আগে ২ লাখ ১০ হাজার বিটিইউ-১৭.৫ টন সিঙ্গেল ইউনিটের কেন্দ্রীয় শীতাপতনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক ভবন ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য ডিজাইনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। এসব এসি জায়গার অপচয় রোধ করে এবং একই সঙ্গে ইনভার্টার টাইপ হওয়ায় বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে ৩ লাখ ১০ হাজার বিটিইউ-২৫.৫ টন সিঙ্গেল ইউনিট এসি ব্যবহারের যে কথা বলা হয়েছে, তার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন বাংলাদেশের ভবনে ব্যবহারের জন্য সম্মত নয়। ফলে ক্রেতারা এসব ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবেন।

ব্রামার নেতারা বলেন, বাজেটে ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসর আমদানিতে শুল্ক রেয়াত প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়বে। দেশে একটিমাত্র কোম্পানি কম্প্রেসর তৈরি করছে। তারাও করছে শুধু রেফ্রিজারেটরের জন্য; এসির জন্য নয়। এ পরিস্থিতিতে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ বিবেচনা করে রেয়াতি শুল্ক আগের অবস্থায় রাখা উচিত।

সংবাদ সম্মেলেনের একপর্যায়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রতিবছর প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে; ব্রামার সঙ্গেও নিশ্চয়ই আলোচনা হয়। কিন্তু সেসব আলোচনার কোনো ফল কি পাওয়া যায় না? জবাবে ব্রামার নেতারা বলেন, এ বছর তাঁরা শুনেছিলেন, শুল্ককাঠামো যা আছে, তা–ই থাকবে। কোনো পরিবর্তন আসবে না। সে জন্য এ বছর ব্রামা কোনো প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়নি।