আইএমএফের ঋণে সংকট কতটা কাটবে
আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের পর শর্তানুযায়ী সরকারকে প্রধানত ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি খাত সংস্কারে হাত দিতে হবে। সংস্কার ঠিকঠাক হলে সক্ষমতা বাড়বে সরকারের। না হলে আটকে যেতে পারে ঋণের কিস্তি। আইএমএফের ঋণ, ঋণ শোধ, সুদের হার, ঋণের প্রভাব ও সংস্কার নিয়ে বিশেষ আয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী ও পরিচালনা পর্ষদে পাস হচ্ছে বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব। আর বাংলাদেশ পাচ্ছে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। মোট সাত কিস্তিতে প্রতিশ্রুত অর্থের প্রথম কিস্তি ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ডলার পাওয়া যাওয়ার কথা এ ফেব্রুয়ারি বা পরের মাস মার্চে। অর্থনীতির ক্রান্তিকালে আইএমএফ এ ঋণ দিয়ে পাশে দাঁড়ানোয় একধরনের দম পাবে বাংলাদেশ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এ ঋণে সংকট কতটা কাটবে। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি যোগ করলে আগামী এক বছরে আইএমএফ থেকে পাওয়া যাবে ১০০ কোটি ডলারের মতো। এ অর্থ কি সংকট কাটানোর জন্য যথেষ্ট?
তিন বছর ধরেই বৈশ্বিক দুই বড় ঘটনার প্রভাবে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে দেশের অর্থনীতি। প্রথমে কোভিড-১৯ ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। উভয় কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। কমে যায় প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। তার ওপরে আছে অভ্যন্তরীণ কারণ। ঠিক সময়ে যথাযথ নীতি প্রণয়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়। যেমন ২০১৯ সালের আমদানি ব্যয় ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার পর সরকারের হুঁশ ফিরেছে। এই ফাঁকে ডলারের দামই শুধু বাড়েনি, তৈরি হয় ডলারের সংকটও। ব্যবসায়ীরা নিজের আয়ই ব্যাংক থেকে ডলারে ফেরত পাচ্ছেন না। আবার পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। পরিস্থিতি যেন অনেকটা কবি তারাপদ রায়ের সেই বিখ্যাত কবিতার শেষ দুই লাইনের মতো। ‘আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার কারণ ঋণের আবেদনের চিঠিতেই স্পষ্ট। জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও বাজেট সহায়তা বাবদ অর্থ চেয়ে গত বছরের জুলাইয়ে আইএমএফকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করার অনুরোধ জানায়। আইএমএফ মিশন নিয়ে এসে সরকারি দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ঋণ দিতে সম্মত হয়।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বৃহৎ অর্থে আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখন গভীর সংকটে। ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারার ব্যর্থতার খেসারত হিসেবে এ সংকট তৈরি হয়েছে। সাময়িক স্বস্তি দিলেও সংকটের গভীরতা এত বেশি যে আইএমএফের এ ঋণে তা মেটানো কঠিন। ঋণ দরকার, তার চেয়েও বেশি দরকার এখন সংস্কার। দুঃখজনক হচ্ছে দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থে যে সংস্কার নিজেদেরই করার কথা, তা করতে হচ্ছে আইএমএফের কথায়।
সেলিম রায়হান বলেন, প্রবাসী আয় যা আসছে তা হয়তো দেড় গুণ করা সম্ভব, যদি আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ আনার পথ বের করা যায়। আইএমএফের ঋণে একটা অবশ্য লাভ সরকার আশা করছে। সেটা হচ্ছে এখন অন্য উন্নয়ন সহযোগীরাও ঋণ দিতে চাইবে। অথচ দরকার হচ্ছে বেশি ঋণের পরিবর্তে বরং অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করা। আর আইএমএফ বললেই সংস্কার, নইলে নয়—এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ যে এবারই প্রথম আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে তা নয়। ছোট-বড় আকার মিলিয়ে সংস্থাটি থেকে মোট ১০ বার ঋণ নিয়েছে আগে। প্রথমবার নেয় ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৮০-৯০ সময়ে ঋণ নেওয়া হয় পাঁচবার। ১৯৯০ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তা সফলভাবেই কার্যকর করেছিলেন। বাণিজ্য উদারীকরণসহ ব্যাংক খাতের সংস্কারের শর্তও ছিল তখন। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে থাকে এবং আসতে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিও বাড়তে থাকে।
১৯৯১-২০০২ সময়ে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশকে কোনো ঋণ নিতে হয়নি। তবে পরের বছর অর্থাৎ ২০০৩ সালেই নিতে হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমিয়ে আনার শর্ত ছিল তখন। লোকসানি পাটকলগুলোও বন্ধ করা হয়েছিল তখন। আদমজী পাটকলও বন্ধ করা হয়েছিল। আবার প্রায় এক দশক পর ২০১২ সালে সাত কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলার আইএমএফ থেকে নেওয়ার চুক্তি করে বাংলাদেশ। অন্যতম শর্ত নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা। এ আইন করতে দেরি করায় শেষের দুই কিস্তি আটকেও দিয়েছিল আইএমএফ।
যে বাস্তবতায় ঋণ নিতে হচ্ছে
আইএমএফ থেকে অর্থ চাওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে অভূতপূর্ব হারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কোভিডের ক্ষত সারিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বিপদ হিসেবে আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। প্রায় এক বছরে চাল, গম, ভুট্টা, সার, ভোজ্যতেলের মতো নয়টি পণ্যে বাড়তি গুনতে হয় ৭৬০ কোটি ডলার। আর আমদানিতে নাটকীয় উত্থান হয় দেশে। ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে আমদানি বাড়ে আগের তুলনায় ৩৯ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতিও দাঁড়ায় ২ হাজার ৮২৩ কোটি ডলারের। এ ছাড়া চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয় ১ হাজার ৭২৩ কোটি ডলার। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ২৭৮ কোটি ডলার।
ঋণ চাওয়ার পেছনে সরকার আইএমএফকে আরও জানায়, প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে বিশ্বের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ হারাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ, আর শেষ দিকে হারাবে জিডিপির ৯ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ১০০ বছরের ডেলটা পরিকল্পনার পাশাপাশি পাঁচ বছর মেয়াদি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ জন্য জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ অর্থ লাগবে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে গত অক্টোবর-নভেম্বরে আইএমএফের একটি মিশন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চার বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে দুই সপ্তাহব্যাপী। ফিরে যাওয়ার দিন গত ৯ নভেম্বর একদিকে রাহুল আনন্দ এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেন।
ওই দিন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, অর্থনীতির বহিঃ খাতকে স্থিতিশীল করা, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা—এ চারটি মূল লক্ষ্য হচ্ছে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার কারণ।
আর রাহুল আনন্দ জানান, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টিকারী উপাদান ঠেকাতে নতুন এ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
প্রধান শর্ত তিন খাতের সংস্কার
সরকারের দপ্তরগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত মিশনের বৈঠকে মোটাদাগে তিনটি খাতের সংস্কারের বিষয় উঠে আসে। আইএমএফের ভাষায় এগুলো হচ্ছে গুণগত মান উন্নয়নসংক্রান্ত শর্ত (কিউপিসি), অবকাঠামোগত মান উন্নয়নসংক্রান্ত শর্ত (এসপিসি) ও সাধারণ প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে কিউপিসি ও এসপিসি হচ্ছে বাধ্যতামূলক শর্ত। এ শর্ত মানতেই হয়। নইলে কিস্তি আটকে যায়।
কিউপিসির মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব পদ্ধতি ঠিক করা, জিডিপির তুলনায় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। আর এসপিসির মধ্যে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে পদ্ধতি কার্যকর করা, আয়কর আইন সংসদে পাস করা, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায়ের অযোগ্য খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, কর ছাড়ের ওপর বিশদ নিরীক্ষা করা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রাখা ইত্যাদি।
এ ছাড়া রয়েছে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করা, বাজেট থেকে সঞ্চয়পত্রকে আলাদা করা, ব্যাংকঋণের বর্তমান সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দেওয়া, নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, কার্বন ট্যাক্স প্রবর্তন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ও সুদের হারের নির্দিষ্ট সীমা প্রত্যাহার করা ইত্যাদি।
জানা গেছে, ছোট সংস্কারের কাজ ঋণ পাওয়ার আগেই শুরু হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব পদ্ধতি ঠিক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আয়কর আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন এবং আদায়ের অযোগ্য খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করার কাজও চলছে। খেলাপি ঋণ প্রকৃতপক্ষে কমানোটাই সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে পদ্ধতি চালুর কথা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আর জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে। আইএমএফের শর্তে এগুলোতে সরাসরি ভর্তুকি কমানোর কথা বলা থাকবে না।
জিডিপির তুলনায় দেশের রাজস্ব সংগ্রহের হার নিম্নতম। কর দেন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত মাত্র ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন কর ছাড়ের পরিমাণসহ হিসাব করলে দেশের রাজস্ব-জিডিপি হার ১৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে। এবার কর ছাড়ের পরিমাণ হিসাবের কাজে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এনবিআরকে কী শর্ত দেওয়া হবে, তা জানা যাবে শর্তগুলো উন্মুক্ত হওয়ার পর।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ গত শনিবার বলছিলেন, সংকট যতটা গভীর, আইএমএফের এ ঋণ তার সমাধান পুরোপুরি দিতে না পারলেও সমাধানের পথে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারবে।
ঋণই কি সুষ্ঠু সমাধানের পথ—এ বিষয়ে মাশরুর রিয়াজ বলেন, একদমই না। অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিতে হবে। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে। আর এতে উৎসাহিত হচ্ছে হুন্ডি। এগুলো বন্ধে সরকার কতটা আন্তরিক, তার ওপর নির্ভর করবে সংকট কত কম সময়ে দূর হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কথাও ভুলে গেলে চলবে না।
ঋণের সুদ ও পরিশোধের সময়
আইএমএফ থেকে নেওয়া ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হবে বাজারের প্রচলিত সুদের হারের ভিত্তিতে। মোট ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ তিন ধরনের ঋণ পাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)।
যেসব দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতায় ভোগে অর্থাৎ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে, আইএমএফ তাদেরই ইসিএফের আওতায় ঋণ দেয়। ইসিএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ১০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এ জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না।
যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে লম্বা সময় ধরে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতায় ভোগে, তাদের ঋণ দেয় ইএফএফ থেকে। ইএফএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ২১৫ কোটি ডলার। আর আরএসএফের আওতায় আইএমএফ ঋণ দেয় সেসব নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশকে, জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনাভাইরাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যাদের কষ্ট হচ্ছে। আরএসএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ১৩০ কোটি ডলার। তিনটির গড় ঋণের সুদ হবে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশের মতো।
তিন ধরনের ঋণের মধ্যে আরএসএফের ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধে বাংলাদেশ সময় পাবে ২০ বছর। তবে ১০ বছরের একটা গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। প্রথম ১০ বছর অবশ্য কোনো ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না। একাদশ বছর থেকে পরিশোধ করতে হবে এ অংশের কিস্তি।
ইসিএফ ও ইএফএফের বাকি ৩২০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে বাংলাদেশ সময় পাবে ১০ বছর। এ অর্থ দুই ভাগে পরিশোধ করা যাবে এবং আলাদা আলাদা গ্রেস পিরিয়ড থাকবে এখানেও। যেমন ইএফএফের ঋণ সাড়ে ৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। এর জন্য সাড়ে ৩ বছর পর্যন্ত কোনো ঋণ পরিশোধ করতে হবে না। আর ইসিএফের ঋণ পরিশোধ করতে হবে না সাড়ে ৫ বছর পর্যন্ত।
ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার সময় হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাস, যার পরের মাসেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জানা গেছে, নির্বাচনের আগমুহূর্তের কিস্তিটা অন্তত আটকে না যাক, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে সরকার। এ জন্য শর্ত পূরণেও কোনো গাফিলতি থাকবে না।