তিন পদক্ষেপে কমবে মূল্যস্ফীতি, মেট্রো চেম্বার ও পিআরআইয়ের আলোচনায় মত
আলোচনা সভায় বলা হয়, সরকারের ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পাশাপাশি পরিচালন খরচও কমানো দরকার।
দেশে টানা ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। কঠোরভাবে মুদ্রানীতি পরিপালন, সংকটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংককে তারল্য জোগান ও বাজেট–ঘাটতি মেটাতে টাকা ছাপানো বন্ধ—এই তিন পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) যৌথ আয়োজনে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা সরকারের পরিচালন ব্যয় কমানোরও পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারি পরিচালন ব্যয় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো দরকার। সেই সঙ্গে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকায় আনতে হবে। এতে একটা ভারসাম্য আসবে।আহসান এইচ মনসুর নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই
গুলশানের পুলিশ প্লাজায় মেট্রো চেম্বার কার্যালয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ও মেট্রো চেম্বারের ট্যারিফ ও ট্যাক্সেশন কমিটির সদস্য আদিব এইচ খান। সভা সঞ্চালনা করেন মেট্রো চেম্বারের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম।
মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেটের আকার ছোট হলেও অর্থায়নে বিরাট সমস্যা রয়ে গেছে। বড় সমস্যা হচ্ছে, ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে টাকা নিতেই হবে। এতে আপত্তির কিছু নেই; কিন্তু ব্যাংকিং খাত দুর্বল। চলতি অর্থবছর আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ। আগামী অর্থবছর একই হারে প্রবৃদ্ধি হলে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আমানত আসবে। সরকার যদি সেখান থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয়, তাহলে ব্যক্তি খাতের জন্য থাকে ২০ শতাংশ। সরকার যদি ব্যাংক আমানতের ৮০ শতাংশ ঋণ হিসেবে নিয়ে নেয়, তাহলে দেশ চলতে পারে না।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, সরকারি পরিচালন ব্যয় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো দরকার। সেই সঙ্গে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকায় আনতে হবে। এতে একটা ভারসাম্য আসবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার পরামর্শ দেন তিনি।
ব্যাংক খাতের সংস্কারে প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বাজেটে ব্যাংক খাত সংস্কারের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। কিন্তু এ খাতে সংস্কার করতেই হবে। অনেক দিন ধরে এটি বকেয়া রয়ে গেছে। সংস্কার না হওয়ায় ব্যাংক খাত বড় হচ্ছে না। ব্যাংক খাতকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে বের করতে না পারলে বেসরকারি খাত সেভাবে ঋণ সহায়তা পাবে না। সরকারও পাবে না।
রাজস্ব আয়ের উচ্চাবিলাসী লক্ষ্যমাত্রার পরও কর ও জিডিপির অনুপাত ৮ শতাংশের কম থাকবে বলে মন্তব্য করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ভারতে কর ও জিডিপির অনুপাত ১৮ শতাংশ। আমাদেরও সে জায়গায় যেতে হবে। কাজেই এখানে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে কর প্রশাসনে নজর দিতে হবে। অটোমেশন করতে হবে। আমরা যদি ৫-১০ বছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১৮ শতাংশে নিতে পারি, তাহলে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না।’
বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য করনীতি সংস্কার, করব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় করা, সামগ্রিক কর সংগ্রহে পদ্ধতিগত লোকসান, কর প্রশাসনের সক্ষমতা এবং পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের ওপর জোর দেন মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান।
মেট্রো চেম্বারের সভাপতি বলেন, প্রতি তিন মাস অন্তর বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কোম্পানির লেনদেনের ওপর ন্যূনতম করের বিধানটি বাতিলের দাবি করেন কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, এটি করনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
আগামী অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবসম্মত বলে উল্লেখ করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার। তিনি বলেন, ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যও অর্জন সম্ভব। তবে এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এতে বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসবে। এখন আমাদের শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং রপ্তানিতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে।’