বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) ২ হাজার কোটি ডলারের (২০ বিলিয়ন) নিচে নেমে গেলে দেশ সংকটে পড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, রিজার্ভ ভালো অবস্থায় নেই, ক্রমশ কমছে।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের অর্থ আসতে সময় লাগবে। সেই পর্যন্ত রিজার্ভ কমতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে এক থেকে তিন বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক মাসের মধ্যে যদি রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়, তাহলে আমরা সংকটে পড়ে যেতে পারি।
গতকাল শনিবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন আহসান এইচ মনসুর। ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ও বৈদেশিক ঋণ’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান।
ঝুঁকিতে রিজার্ভ
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান। তিনি বলেন, ৩ হাজার কোটি ডলার (৩০ বিলিয়ন) ডলারের কার্যকর রিজার্ভ আছে। সেখানে আবার ঋণপত্রের বিপরীতে আগের দায় আছে ২ হাজার ৩৪০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এগুলো কোভিডের সময় পিছিয়ে দেওয়া ঋণপত্রের দায়। এসব দায় পরিশোধ হলে রিজার্ভ বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর এক বছরে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭১৭ কোটি ডলার।
সেমিনারে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফের ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এতে রিজার্ভ সুসংহত হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশি ঋণদাতাদের আস্থা বাড়াবে।’ তিনি আরও বলেন, আইএমএফ ঋণ না দিলে হয়তো বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ২০-২৫ কোটি ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাওয়া যেত না। আইএমএফ আছে বলেই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ১০০ কোটি ডলার পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এম আকাশ বলেন, ‘আমরা সংকটের দিকে যাচ্ছি, যদিও সংকটে এখনো পড়িনি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের নিচে নেমে যায়নি।’
দুর্নীতি ও ব্যয় সাশ্রয়
সেমিনারে অংশ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আহসান এইচ মনসুরকে প্রশ্ন করেন, আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে সুশাসনের শর্ত দিয়েছে কি না? প্রশ্নের জবাবে আইসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যত দূর জানি, এ বিষয়ে তেমন কিছু নেই, এটি দুঃখজনক।’
সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার।অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজসহ সাংবাদিকেরা।