ব্যবসায় ময়মনসিংহ এগিয়ে, কৃষি দিনমজুরি বেশি রংপুরে, বিবিএসের  জরিপ

দেশে আট বিভাগের মধ্যে শ্রমশক্তিতে রাজশাহীর মানুষের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। এই বিভাগের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬১ জনই শ্রমশক্তিতে অংশ নেন। অন্যদিকে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণে সবচেয়ে পিছিয়ে সিলেট। এই বিভাগের ৫১ শতাংশ মানুষ শ্রমশক্তিতে আছেন। 

দেশের অভ্যন্তরে কাজে নিয়োজিত আছেন, এমন মানুষের মধ্যে শতকরা ২৩ জনের নিজের ব্যবসা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় ময়মনসিংহ সবচেয়ে এগিয়ে, যেখানে ৩০ শতাংশ মানুষ ব্যবসা করেন। অন্যদিকে কৃষিকাজে দিনমজুরি করার হার বেশি রংপুরে। এই বিভাগের মোট জনগোষ্ঠীর ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে দিনমজুরি করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএসের) ‘আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিকভাবে দেশে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৫৭ দশমিক ৪১। এ ক্ষেত্রে পুরুষের হার ৭৩ দশমিক ৭৫। নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৪১ দশমিক ৪১।  

একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার যে অংশ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়োজিত ও নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক, ওই অংশই হচ্ছে সেই দেশের শ্রমশক্তি; অর্থাৎ কর্মে নিয়োজিত ও বেকার—উভয় জনগোষ্ঠীর সমষ্টিই হলো শ্রমশক্তি। বিবিএসের জরিপে ১০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিককে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

শ্রমশক্তিতে রাজশাহী বিভাগের মানুষের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি (৬১ শতাংশ)। সিলেট সবচেয়ে পিছিয়ে (৫১ শতাংশ)। বাকি বিভাগগুলোর মধ্যে খুলনার ৫৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, রংপুরের ৫৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ঢাকার ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, বরিশালের ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ময়মনসিংহের ৫৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও চট্টগ্রামের ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ শ্রমশক্তিতে রয়েছেন। 

সামগ্রিকভাবে রাজশাহী এগিয়ে থাকলেও শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণে খুলনা সবচেয়ে এগিয়ে। সেখানকার ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ পুরুষ কাজ করেন বা করতে ইচ্ছুক। এই হার সবচেয়ে কম সিলেটে, ৬৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যদিও সামগ্রিকভাবে বিভাগটির অর্ধেক (৫১ দশমিক ৩৭ শতাংশ) শ্রমশক্তিতে অংশ নেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কম। এর মধ্যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নতি, নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, জন্মহার হ্রাস—এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ আনুপাতিক হারে বাড়েনি। বিবিএসের আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপেও উঠে এসেছে। 

দেশের শ্রমশক্তিতে জাতীয়ভাবে নারীদের অংশগ্রহণ ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এই হার সবচেয়ে কম সিলেটে, পৌনে ৩৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন রাজশাহীর নারীরা। এই বিভাগের ৪৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ নারী শ্রমশক্তিতে আছেন।

দেশে ২৩ শতাংশের নিজস্ব ব্যবসা

দেশে কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ২৩ জনের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া ২৯ দশমিক ৬১ শতাংশ কর্মচারী, সাড়ে ১০ শতাংশ অকৃষি দিনমজুর, ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ কৃষি দিনমজুর ও ২৫ শতাংশ পারিবারিক কৃষিকাজে বিনা মজুরিতে সাহায্যকারী হিসেবে কর্মরত—এমন তথ্যই উঠে এসেছে বিবিএসের প্রতিবেদনে।    

আট বিভাগের মধ্যে নিজস্ব ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি যুক্ত ময়মনসিংহের মানুষ, যেখানে শতকরা ৩০ জনের নিজস্ব ব্যবসা আছে। তারপর খুলনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ মানুষ নিজস্ব ব্যবসায়ে যুক্ত। এ ছাড়া বরিশালের ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, রাজশাহীর ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, রংপুরের ২৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, ঢাকার ২১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, সিলেটের ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ ও চট্টগ্রামের ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে।  

এদিকে কৃষি দিনমজুর বেশি রংপুরে। বিভাগটির মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কৃষিকাজে দিনমজুরি করেন। এ ছাড়া সিলেটের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ, রাজশাহীর ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও খুলনার ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ কৃষি দিনমজুর। এর বাইরে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ কৃষি দিনমজুর। সবচেয়ে কম কৃষি দিনমজুর ঢাকায়, ২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

অন্যদিকে কর্মচারী বিবেচনায় কর্মরত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। এই বিভাগের ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশই কর্মচারী। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম (২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ (২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ)। এ ছাড়া বরিশালের ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, সিলেটের ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ, খুলনার ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ ও খুলনার ১৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ মানুষ কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। 

দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন ২৯ শতাংশ।

জাতীয়ভাবে কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর ৪২ দশমিক ২১ শতাংশ পূর্ণকালীন কাজ করেন। প্রায় ১৪ শতাংশ খণ্ডকালীন, আড়াই শতাংশ চুক্তিভিত্তিক, ১৩ শতাংশ মৌসুমি ও ২৯ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন।

দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করার ক্ষেত্রে রাজশাহী ও রংপুর অন্যান্য বিভাগের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। রাজশাহীর মোট জনগোষ্ঠীর ৪১ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। রংপুরে তা ৩৬ শতাংশ। দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করার হার সবচেয়ে কম ঢাকায়, ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

এ ছাড়া পূর্ণকালীন কাজ সবচেয়ে বেশি করেন ঢাকার মানুষ। এই বিভাগের ৫৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ পূর্ণকালীন কাজ করেন। অন্যদিকে খণ্ডকালীন কাজে ময়মনসিংহ সবচেয়ে এগিয়ে। এই বিভাগের প্রায় ১৯ শতাংশ মানুষ খণ্ডকালীন কাজের সঙ্গে যুক্ত। 

কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর ৭২ শতাংশই নগদ বেতন বা মজুরি পান। পল্লি এলাকায় এই হার ৮০ হলেও শহরাঞ্চলে ৬২ শতাংশ। সাড়ে ২১ শতাংশ ব্যাংক হিসাবে তাঁদের বেতন বা মজুরি পেয়ে থাকেন।