নতুন সরকারি চাকরিজীবীরাও বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশনে যাবেন
সরকারি চাকরিজীবীদেরও বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির (স্কিম) আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে এখন যাঁরা সরকারি চাকরিতে আছেন, তাঁরা বিদ্যমান নিয়মেই পেনশন পাবেন। ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর সরকারি চাকরিতে যাঁরা নতুন নিয়োগ পাবেন, তাঁরা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আজ বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তব্যে এমন ঘোষণা দেন।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘পেনশন সুবিধা পান, এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের আমরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসব। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ইতিমধ্যে এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। শিগগির অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্যও আমরা এ ব্যবস্থা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে চালু করব।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ, যা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ পেনশন ব্যবস্থাপনার তহবিল পরিচালনার ব্যয় সরকার বহন করায় ও বিনিয়োগের মুনাফা জমাকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায়, এটি হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পেনশন কর্মসূচি।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ব্যাংকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোয় গিয়েও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির জন্য নিবন্ধন করা যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান না থাকা বা কম জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। চাঁদা জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মোবাইলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমেও চাঁদা জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। একজন চাঁদাদাতা অনলাইনেই সরাসরি দেখতে পারবেন তাঁর জমা চাঁদার মোট টাকা ও লভ্যাংশের পরিমাণ।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পাশাপাশি একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের অংশ হিসেবে দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসার প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জায়গা দেন সর্বজনীন পেনশনের বিষয়টিকে।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দেশে চারটি কর্মসূচি নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট মাসে নিবন্ধন হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬৯ জনের। আর পেনশন তহবিলে জমা পড়েছে ৮২ কোটি টাকা।
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতাভুক্ত করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণা তো স্পষ্ট। এ বছরের ১ জুলাই থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা এবং আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে তাঁদের ছাড়া অন্য সব সরকারি চাকরিতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসবেন।’
গত মার্চে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেবেন, সরকার তাঁদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করল।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটি মনে করে, এ কারণে মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে আগ্রহ পাবেন না।