বেঙ্গল অর্থনৈতিক সম্মেলন
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান
বিমসটেকের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা বা অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দুই দিনের বেঙ্গল অর্থনৈতিক সম্মেলন। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত দুই দিনের এ সম্মেলন শেষে ব্যাংকক ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়।
ব্যাংকক ঘোষণাপত্রে বিমসটেকের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরে জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য বাধা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সামষ্টিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মোকাবিলার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শক্তিশালী আঞ্চলিক পরিচয় গড়ে তুলতে বিমসটেক টেকনোলজি ব্যাংক তৈরি, সমন্বিত বৃত্তি চালু এবং এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে।
ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বেঙ্গল অর্থনৈতিক সংলাপ শীর্ষক এ সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের ১০০ জনের বেশি গবেষক, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও অংশীজন। সম্মেলনে আঞ্চলিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। সানেমের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
১৯৯৭ সালে ব্যাংককে প্রতিষ্ঠিত হয় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি সদস্যদেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সানেম আয়োজিত এ সংলাপের লক্ষ্য ছিল নতুন বিশ্বব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করা।
সম্মেলনের ছয়টি অধিবেশন এবং একটি বিশেষ অধিবেশনে এ অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। অধিবেশনগুলোতে আলোচনা হয়—নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ; বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ; শাসনব্যবস্থা; জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক; ভবিষ্যতের সহযোগিতার বৃদ্ধি; আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়।
সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান ব্যাংকক ঘোষণা পাঠ করেন। দুই দিনের সম্মেলনের আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি করা এ ঘোষণাপত্র বিমসটেক সচিবালয়ের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের পরিচালক শেওয়াং দরজি টির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের জন্য সানেমের পক্ষ থেকে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে ধন্যবাদ জানান। দুই দিনের এ সম্মেলনের প্রথম দিনে মূল বক্তব্য দেন বিমসটেক সচিবালয়ের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ইন্দ্র মণি পান্ডে। এ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অধ্যাপক সেলিম রায়হান ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম পরিচালক মো. জাকারিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ-আল-মামুন, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সেলিমা আহমেদ প্রমুখ।