সুখবর পাবেন নারী উদ্যোক্তারা

  • আগামী বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক লেনদেনের ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি মিলতে পারে।

  • ব্যক্তিশ্রেণির নারী করদাতার করমুক্ত বার্ষিক আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকাই থাকছে।

  • আয়কর অধ্যাদেশে স্বীকৃতি মিলবে মোবাইল ফোনের আর্থিক সেবা।

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নারী উদ্যোক্তারা সুখবর পেতে যাচ্ছেন। করে তাঁরা ছাড় পাচ্ছেন। কোনো নারী উদ্যোক্তার বার্ষিক লেনদেন যদি ৭০ লাখ টাকার কম হয়, তাহলে ওই উদ্যোক্তাকে কোনো কর দিতে হবে না। বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা লেনদেনে কোনো কর দিতে হয় না। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহ বাড়াতে করমুক্ত লেনদেন সীমা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

বার্ষিক লেনদেন বা টার্নওভারের নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে ব্যবসা খাত ভেদে নির্দিষ্ট করপোরেট কর দিতে হয়। আগামী ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। সেখানেই তিনি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য টার্নওভারের ভিত্তিতে কর অব্যাহতির সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে পারেন।

বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এত দিন আলাদা কোনো কর অব্যাহতি ছিল না। পুরুষ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁদের ব্যবসা করতে হয়। তাই আগামী বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতেই নতুন এই উদ্যোগ।

নরসিংদী শহরে ‘রিফ্লেকশন বিডি’ নামের একটি ফ্যাশন হাউস চালান রওশন আরা পারভীন। এই করোনার সময়ে তিনি এই ফ্যাশন হাউসটি চালু করেন। রওশন আরা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, এই ধরনের কর ছাড় দেওয়া হলে নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা হবে। তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া করোনার সময় যেসব নারী উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরাও কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ক্ষেত্রেও নারী করদাতারা কিছুটা ছাড় পেয়ে থাকেন। বর্তমানে পুরুষ করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। নারীদের ক্ষেত্রে এ সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিচ্ছে না এনবিআর। আগের মতোই নারী করদাতাদের জন্য বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকাই রাখা হচ্ছে।

এদিকে, কোনো প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরিত নারী-পুরুষদের নিয়োগ দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য কর ছাড় আসছে। এতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা এই সুবিধার আওতায় আসবেন। এই ধরনের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হলে করপোরেট করে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মিলতে পারে। শর্ত থাকতে পারে, প্রতিষ্ঠানের মোট জনবলের নির্ধারিত একটি অংশ (৫ শতাংশ) বা ১০০ জনের বেশি এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা।

মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার স্বীকৃতি থাকবে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন খাতের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের বেতন-ভাতা এখন মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) মাধ্যমে দেওয়া হয়। শুধু মার্চ মাসেই সারা দেশে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন এমএফএসের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে। বেতন-ভাতা প্রদানে সেবাটি এখন দিনকে দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশে এর কোনো স্বীকৃতি নেই। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ১৫ হাজারটাকার বেশি বেতন-ভাতা দিতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দিতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান তা বেতন-ভাতার খরচ হিসাবে দেখাতে পারবে না।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেতন-ভাতা ব্যাংকিং চ্যানেলের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের আর্থিক সেবার মাধ্যমে দিলেও তা গ্রহণ করার ঘোষণা দিতে পারে এনবিআর।

একই ভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ভবন ভাড়ার টাকা পরিশোধ করা হলেও তা গ্রহণ করবে আয়কর বিভাগ। এ ছাড়া কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্য বা সেবার বিলও এমএফএসের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবে। বর্তমানে এ ধরনের বিলের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন সেখানে এমএফএস যুক্ত হবে।