বিমা খাতে অর্থ মন্ত্রণালয় যেন ‘কিল মারার গোসাঁই’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বিমা খাত দুরবস্থায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুর্বল। নজর নেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
শুধু ব্যাংক আর পুঁজিবাজার নয়, আর্থিক খাতের অন্যতম অংশ বিমা খাত। কিন্তু ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশ এ খাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে পিছিয়ে। ‘দুর্ভাগ্যজনক’ শব্দের বদলে খাতটির প্রতি নীতিনির্ধারকদের চরম অবহেলা ও নীতি প্রণয়নে দক্ষতার অভাব বলাটাই এখানে জুতসই হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দক্ষতার অভাবটা রয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনো, যখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে নাম কাটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উদ্বেগের দিক হলো, বিমা খাতে দুরবস্থা দূর করার মাথাব্যথা কারও নেই।
দেশের বিমা খাত কতটা পিছিয়ে, তা আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসের (পিডব্লিউসি) একটি হিসাবে পরিষ্কার। তারা বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিমা খাতের অবদান ছিল (প্রিমিয়াম আয়) মাত্র শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর বিমা প্রিমিয়ামে মাথাপিছু ব্যয় বছরে ৯ মার্কিন ডলার (৭৭৪ টাকা), যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। লজ্জাটা একটু পেতেই হয় এ কারণেও যে দেশে সরকারি দুটি সংস্থাসহ ৮৩টি বিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বলেও মনে করা হয়।
আসলে খাতটি যাদের হাতে পড়ার কথা ছিল, তাদের হাতে পড়েনি। ফলে এটি অর্থনীতির অন্য খাতগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের এ খাতের খারাপ অবস্থার কথা অস্বীকার করার জো নেইআ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থমন্ত্রী
বিমা খাতের পরিস্থিতির উন্নয়নে বিমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে ২০১১ সালে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করা হয়। এক যুগ হতে চলেছে, বিমা খাত আগের মতোই আছে। কেউ কেউ মনে করেন, ক্ষেত্রবিশেষে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
বিমা খাতের দুরবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে খাতটি যাদের হাতে পড়ার কথা ছিল, তাদের হাতে পড়েনি। ফলে এটি অর্থনীতির অন্য খাতগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের এ খাতের খারাপ অবস্থার কথা অস্বীকার করার জো নেই।’
বিমা খাত কত বড়
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, ২০২০ সালে জীবনবিমা খাতে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এ বছর লাইফ ফান্ড বা জীবনবিমা তহবিলের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকায়।
একই বছর নন-লাইফ বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সম্পদ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকায়। বিনিয়োগ ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুর্বল হলে একটি খাতকে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। আমাদের লোকবল দরকার ২৫০ থেকে ৩০০ জনের। আছে এক-চতুর্থাংশের মতো। আমরা এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বলিষ্ঠ ভূমিকা আশা করছি
আইডিআরএর ওয়েবসাইটে দেওয়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের হিসাবে বিমা খাতে জীবনবিমা পলিসির সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখের মতো। আর সাধারণ বিমা পলিসির সংখ্যা ২৪ লাখের বেশি। বিমা খাতে ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি প্রতিনিধি বা এজেন্ট রয়েছেন। বিমা কোম্পানিগুলোতে কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।
বাণিজ্য থেকে অর্থে
ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শেয়ারবাজার—সবই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বজুড়ে এটাই রেওয়াজ। কিন্তু দেশে স্বাধীনতার পর থেকেই বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা অধিদপ্তর ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালে বিমা খাতকে বাণিজ্য থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসে। জারি করে দুটি অধ্যাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ‘বিমা আইন, ২০১০’ এবং ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করে। আইনের অধীনে ২০১১ সালে আইডিআরএ যাত্রা শুরু করে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনে এম শেফাক আহমেদকে বসান আইডিআরএর চেয়ারম্যান পদে, যিনি অ্যাকচুয়ারি ডিগ্রিধারী। বিমা খাতের বৈশ্বিক পর্যায়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে বলা হয় অ্যাকচুয়ারি।
চেয়ারম্যান-সদস্য নিয়োগেই দায়িত্ব শেষ!
শেফাক আহমেদকে ২০১১ সালে তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি সংস্থাটিতে চারজন সদস্য নিয়োগ দেয় সরকার। ব্যস, এটুকুই। সংস্থাটির জনবল নিয়োগে গড়িমসি চলতে থাকে।
অবশ্য শেফাক আহমেদ অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ চালিয়ে আসছিলেন। ২০১১-১২ সময়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। তাঁরা এখনো সেখানে রয়েছেন, অস্থায়ীভাবে। এসব অস্থায়ী কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত ও পরিদর্শন দল গঠন করেই অনেক বেসরকারি বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আইডিআরএ। এ কারণে একটি বিমা কোম্পানি শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় ‘হয়রানিমূলক’ মামলা করেছিল।
শেফাক আহমেদকে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। তাঁর পরে আইডিআরএতে চেয়ারম্যান হয়ে আসেন বিমা খাতের বাইরের লোক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। এরপর চেয়ারম্যান নিয়োগ পান বিমা খাতের লোক এম মোশারফ হোসেন। যদিও বিমা কোম্পানিগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে আইডিআরএর ব্যবস্থা নেওয়ার হার কমছে বলেই অভিযোগ।
আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুর্বল হলে একটি খাতকে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। আমাদের লোকবল দরকার ২৫০ থেকে ৩০০ জনের। আছে এক-চতুর্থাংশের মতো। আমরা এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বলিষ্ঠ ভূমিকা আশা করছি।’
কোথায় কত জনবল
দেশের ৬০টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে সাত হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ২৫০ জন। আরও নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। আর আইডিআরএর জনবল ৮০ জনের মতো, অর্থাৎ একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে একজন লোকও নেই। আবার বেশির ভাগের চাকরিই অস্থায়ী।
আইডিআরএ ২০১২ সালে ১৯৫ জনের জনবলকাঠামোর একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শুধু ৯৫ জনের কাঠামো অনুমোদন করে, যা তখনকার আইডিআরএ মেনে নেয়নি। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আবার ১৯৫ জনের অনুমোদন চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ দফায় অনুমোদন করে ১৫৫টি পদ।
আইডিআরএর জনবলকাঠামো চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। এরপরও কেটে গেছে পাঁচ বছর। এখনো জনবল নিয়োগ হয়নি। নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদে মন্ত্রণালয় থেকে বিমা খাতের বাইরের লোকদের প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। অথচ ব্যাংকের চেয়েও বেশি ‘টেকনিক্যাল’ বিমা খাত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পদে কোনো উপসচিবকে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া যেমন যুক্তিযুক্ত নয়, তেমনি আইডিআরএতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে পাঠানোও যৌক্তিক নয়। প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের বিমা খাতের জটিল বিষয়গুলো বুঝতে সময় লাগে। এর মধ্যে তাঁদের বদলি হয়ে যায়। আইডিআরএতে এখন মূল পদগুলোতে কাজ করছেন প্রেষণে আসা প্রশাসন ক্যাডারের তিনজন যুগ্ম সচিব ও চারজন উপসচিব।
অভিযোগ আছে, আইডিআরএকে শক্তিশালী করার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো নজর নেই। বরং মাঝেমধ্যেই ছড়ি ঘোরানো হয়। বিষয়টা অনেকটা ‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোসাঁই’ অবস্থার মতো। যেমন ২০২০ সালের মার্চে যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব (সাবেক) আসাদুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও সদস্য ছাড়া আইডিআরএর অন্যদের বেতন-ভাতা অর্ধেক করে দেন। তিনি নিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আবার সবার জন্য পূর্ণ বেতন-ভাতার আদেশও দিয়ে যান।
২০২১ সালের ২৮ আগস্ট অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ পদোন্নতি পেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের
সচিব হয়ে আসেন। যদিও আইডিআরএতে অস্থায়ীদের স্থায়ী করার বিষয়ে উদ্ভাবনী কোনো উদ্যোগ নেই তাঁরও।
সদস্যপদও খালি
আইডিআরএর চারটি সদস্যপদের মধ্যে এখন দুটি খালি। নন-লাইফ সদস্যপদটি খালি সাড়ে চার বছর ধরে। লাইফ সদস্যপদেও কেউ নেই এক বছরের বেশি সময় ধরে। এ নিয়োগের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। বিভাগটি অবশেষে গত ২৩ নভেম্বর আইডিআরএর দুই সদস্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে বয়সের শর্ত দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ বছর। অথচ আইন অনুযায়ী ৬৪ বছর বয়সী যে কেউ এ দুই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আইডিআরএর সদস্য হওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা আছে, শুধু বয়স ৬০ বছর ২ মাস, এমন একজন সম্ভাব্য প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিজ্ঞপ্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হয় গোঁয়ার্তুমি, নয় অজ্ঞতা অথবা কারও কারও প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের শামিল। সাড়ে চার বছর গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ না নেওয়াটাও বিভাগটির দায়িত্বহীনতা।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, ৬০ বছরের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ায় যোগ্য লোকেরা আবেদন করতে পারছেন না। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর নজরে আনা হলে গত রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বয়সসীমা ৬২ করে দিচ্ছি। সবাইকে নিয়েই খাতটিকে উজ্জীবিত করব। অস্থায়ীদের স্থায়ী করার ব্যাপারটিও দেখব।’
সমিতির দুর্বলতা ও বাজেটীয় অবহেলা
বিমা কোম্পানিগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি পদে ১১ বছর ধরে রয়েছেন শেখ কবির হোসেন। তাঁকে এ পদে রাখতে বাতিল করা হয়েছে পরপর দুই মেয়াদের বেশি সভাপতি না থাকার বিধানটি।
বিমা খাতের স্বার্থে সমিতিটি কী ভূমিকা পালন করছে, তা শুধু একটি বিষয় খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে। সেটি হলো, বাজেটে পাঁচ বছর ধরে একই দাবি জানিয়ে আসছে বিআইএ। যদিও একটিও পূরণ হয়নি। দাবিগুলো হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করা, জীবনবিমা গ্রাহকের মুনাফার ওপর থেকে ৫ শতাংশ মূলধনি কর প্রত্যাহার করা এবং পুনর্বিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিল করা।
বিআইএর যুক্তি হচ্ছে, কোনো বিমাগ্রহীতা জীবনবিমার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে গ্রাহক স্বাস্থ্যবিমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পলিসি গ্রাহকদের মুনাফার ওপর মূলধনি কর নেই।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেনের সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তাঁর একান্ত সচিব সুমিত বিশ্বাস জানান, অসুস্থ থাকায় তিনি (শেখ কবির) কথা বলতে পারবেন না।
বিমা খাতে আইডিআরএর ভূমিকা নিয়ে বিআইএর প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আইডিআরএর চেয়ারম্যান পদটি কোন পদের মর্যাদাসম্পন্ন, সেটাই এখনো ঠিক হয়নি। আর ১০ বছরে আইডিআরএর ৫০ জনের মতো কর্মচারী যাঁরা ইতিমধ্যে কাজ শিখেছেন, তাঁদের চাকরি ঝুলিয়ে রেখেও মন্ত্রণালয় ঠিক করছে না।
‘উপযুক্ত লোক দরকার’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিমা খাতের মূল সমস্যা এ খাতের ওপর মানুষের আস্থা কম। তাই কেউ বাধ্য না হলে বিমা করতে আগ্রহী হন না। অথচ পাশের দেশ ভারতেই বিমা জনপ্রিয়। লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এলআইসি) সম্পদ এতই যে তা দিয়ে বাংলাদেশের সাতটি বাজেট করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারলে বিমার প্রত্যেক মানুষের আগ্রহ বাড়বে। মানুষের জীবন ও ব্যবসাক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। এ জন্য দরকার শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
অ্যাকচুয়ারি ডিগ্রিধারী দেশের অন্যতম বিমা ব্যক্তিত্ব সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ মনে করেন শেয়ারবাজার জটিল, কেউ মনে করেন ব্যাংক খাত। আমার মতে বিমা অত্যন্ত জটিল খাত। এ খাতে তাই উপযুক্ত লোক দরকার, যার ঘাটতি আছে।’