এক মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে আরেকটি প্রতিষ্ঠান নিজেই প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের সেবা নিয়েও বিদ্রূপপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক প্রচারণা চালাচ্ছে। আবার আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটিয়েছে অজ্ঞাতরা। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নজরে এসেছে। এসব বন্ধে বিকাশ ও নগদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বন্ধ হয়নি বিদ্রূপপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক প্রচারণা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করে এমন প্রচারণা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ধরনের প্রচারণায় বিদ্রূপপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক শব্দ পরিহার করতে বলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বাণিজ্যিক প্রচারণা ও জনসংযোগমূলক বিজ্ঞাপনে এক সেবাদাতা কর্তৃক অন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করা বা অন্য সেবা সম্পর্কে বিদ্রূপপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহারের বিষয়টি নজরে এসেছে, যা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
এ বিবেচনায় ছাপা কাগজ, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বাণিজ্যিক প্রচারণা, জনসংযোগমূলক বিজ্ঞাপন বা অনুরূপ প্রচারণাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে বিদ্রূপপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক শব্দের ব্যবহার পরিহারের নির্দেশনা দেওয়া হলো। নেতিবাচক সব ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি প্রচারণামূলক সব কার্যক্রমে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ অনুযায়ী পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটরকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নগদের একটি বিজ্ঞাপন প্রচার, বিকাশ ও এর প্রধান নির্বাহীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভিডিও চিত্র তৈরি, নগদের সেবার বিরুদ্ধে সারা দেশে পোস্টার ছড়ানো, এ জন্য অজ্ঞাত ১০ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নির্দেশনা দিয়েছে। আর্থিক খাতে এমন আচরণ বরদাশত করা হবে না বলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানায়।
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটরকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকাশ ও নগদকে সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠান দুটি যাতে একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার না চালায়, মৌখিকভাবে সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় এই নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এরপরও বন্ধ হয়নি অপপ্রচার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, মোবাইলে আর্থিক সেবা বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাই জনগণ যাতে সহজে সেবাটি পায় ও টাকার নিরাপত্তা থাকে, এ জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন কিছু সহ্য করা হবে না, যা আর্থিক সেবার বাজারের জন্য খারাপ হয়। প্রয়োজনে এজেন্ট নিয়োগ, বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু নির্ধারণ, নতুন সেবাসহ সবকিছুর জন্য অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে।
নগদ ডাক বিভাগের সেবা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের চেষ্টা করছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদনও দিয়েছে। পাশাপাশি নগদের জমা টাকার লেনদেনে ডাক বিভাগের পুরো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর বিকাশ বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ১৫টি প্রতিষ্ঠান মোবাইলে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। এর নিবন্ধিত গ্রাহক প্রায় ১০ কোটি। গত ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। তবে এই হিসাবে নগদের তথ্য নেই।