আসছে বাজেট ২০২১–২২
বাজেট ঘাটতি এবার আরও বড় হচ্ছে
ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেটের জন্য দুই লাখ কোটি টাকার বেশি দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ধার করতে হবে।
দেশের ইতিহাসে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আসছে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ছিল ৬ শতাংশ। তবে আগের ১০ বছর ধরে বাজেট ঘাটতি রাখা হচ্ছিল ৫ শতাংশের নিচে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এই ব্যয় মেটানো তথা বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দুই লাখ কোটি টাকার বেশি ধার নিতে হবে। করোনাভাইরাসের অভিঘাতে দেশে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণেই সরকারকে এ পথে যেতে হচ্ছে বলে জানান বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ বা ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। কোনো সরকারের এক অর্থবছরের আয়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা যতটুকু বেশি হয়, সেটাই হচ্ছে বাজেট ঘাটতি।
বাজেট ঘাটতির পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি দিয়ে থাকেন দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদেরা। কেউ বলেন, ধার করে বাজেট করলে অর্থের ছড়াছড়ি হয়, মূল্যস্ফীতি বাড়ে এবং ব্যাংক খাতের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এ ছাড়া ঋণের বিপরীতে সরকারকে দিতে হয় চড়া সুদ। যে কারণে বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে হয় সুদ পরিশোধে এবং এতে আর্থিক খাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।
আবার কেউ বলেন, আয় কম হলে উন্নয়নকাজের জন্য ব্যয় কমে যায়। ফলে উন্নয়নকাজে ব্যয় বাড়াতেই করা হয় ঘাটতি বাজেট।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে এম কিনস ১৯৩০ সালেই বলেছিলেন, ঘাটতি সৃষ্টি হলেই মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে না। মন্দায় অচল অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে বাজেট ঘাটতি। এতে উৎপাদন বাড়ে। ঘাটতি তাই মন্দার মহৌষধ।
দেখে নেওয়া যাক বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে সরকারকে কী কী করতে হয়। মোটাদাগে এর দুটি ভাগ, বিদেশ থেকে ও দেশ থেকে ঋণ নেওয়া। এর মধ্যে দেশ থেকে নেওয়া ঋণের অংশই বেশি। এরও আবার দুটি ভাগ রয়েছে। যেমন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ গ্রহণ। এ ছাড়া আছে বিদেশি অনুদান।
জানতে চাইলে উন্নয়ন অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রথম আলোকে বলেন, করোনার এই সময়ে বড় বাজেট ঘাটতিই সংগত। দুই দফায় করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে এখন ধার করে হলেও মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছানোর যে পদ্ধতি, তা এখনো তৈরি হয়নি। ঘুরেফিরে ওই ৩৫ লাখই পায়। এর বাইরে কোনো দরিদ্রকে চিহ্নিত করার উদ্যোগও নেই সরকারের।
চলতি অর্থবছরের অঙ্কটি দেখা যেতে পারে। যেমন এই অর্থবছরে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। আর দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে পুরো অর্থবছরে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অনুদান ও অন্যান্য ঋণ মিলিয়ে আছে আরও ৯ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কতটা কমতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ধারণা, লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ সরকারকে নিতে হবে না। কারণ, বিদেশি ঋণই এখন সস্তা। ফলে ব্যাংক খাতের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কাও কম।’