বাজেটে ৭২% নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত

প্রস্তাবিত বাজেটে বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে সিগারেটের মূল্য কমবে। এতে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী ধূমপানে উৎসাহিত হবে। একই সঙ্গে বিড়ি ও জর্দা-গুলের দাম ও শুল্ক অপরিবর্তিত রাখায় নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে লাভবান হবে তামাক কোম্পানি, সরকার হারাবে বাড়তি রাজস্ব। লাখ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু, পঙ্গুত্ব এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি অগ্রাহ্য করে তামাক ব্যবসা উৎসাহিত করার এ বাজেট প্রস্তাব সার্বিকভাবে চরম হতাশাজনক।

প্রধানমন্ত্রীর ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণার সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এসব কথা জানায়।

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের স্বাক্ষরিত প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম ও শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা (৫.২ শতাংশ) ও ৭ টাকা (৫.৫ শতাংশ) বাড়িয়ে ১০২ টাকা এবং ১৩৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। উভয় স্তরেই ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। এতে উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে শলাকা প্রতি সিগারেটের দাম বাড়বে যথাক্রমে ৫০ পয়সা ও ৭০ পয়সা, যা মাথাপিছু আয় বাড়ার তুলনায় অতি নগণ্য।

প্রজ্ঞা বলেছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিড়ি, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য জর্দা–গুলের কর ও মূল্য প্রস্তাবিত বাজেটে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। এতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় এসব তামাকজাত পণ্য আরও সস্তা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন।

তবে মোট তামাক রাজস্বের ১ শতাংশের কম আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। সরকার ধারাবাহিকভাবে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য থেকে বাড়তি রাজস্ব আয়ের ব্যাপক সুযোগ হারাচ্ছে।

এ বি এম জুবায়ের আরও বলেন, ‘তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর কর ও দাম প্রস্তাবের কোনো প্রতিফলন নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। তামাক কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হলে আরেক দফা সস্তা হবে তামাকজাত পণ্য, বাড়বে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি। তাই চূড়ান্ত বাজেটে আমাদের কর ও মূল্য প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’