বাজেটে যেখানে আগ্রহ বেশি

আসছে বাজেট ২০২২–২৩

বাজেটের মৌসুমে মধ্যবিত্ত করদাতাদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। তাদের দুশ্চিন্তার বড় অংশজুড়ে থাকে কোন কোন পণ্যের দাম বাড়বে। কীভাবে আয়কর একটু কমানো যায়। প্রতিবারই বাজেট ঘোষণার পর অনেকেই সংবাদপত্রে খুঁটিনাটি পড়েন কিংবা মনোযোগ দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল দেখেন।

বাজেটের সব তথ্য–উপাত্ত এখন ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায়। তাই চাইলে সেখান থেকেও তথ্য জেনে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাজেটে একজন ব্যক্তির জন্য কী আছে, সেটাই দিন শেষে সাধারণ মানুষের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। এ ছাড়া বাজেটের কোন কোন বিষয়ের প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ, তা জেনে নেওয়া যাক।

দ্রব্যমূল্য

বাজেট এলেই বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ে একধরনের অস্থিরতা দেখা যায়। তবে ইদানীং এই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবু সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানেই যেন জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি। কারণ, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া মানেই সংসার খরচ বৃদ্ধির দুশ্চিন্তা। এবার দেখা যাক, জিনিসপত্রের দামের ওপর বাজেট কীভাবে প্রভাব ফেলে। বাজেটে পণ্য আমদানি, উৎপাদন বা বিক্রি পর্যায়ে শুল্ক-কর বাড়িয়ে দিলেই জিনিসপত্র বা সেবার দাম বেড়ে যায়। আবার শুল্ক-কর কমালে দাম কমার কথা।

বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, অগ্রিম কর, আগাম ভ্যাট ইত্যাদি বসানো হয়। আবার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও কোনো কোনো পণ্যের ওপর বসানো হয়। এটি বাজেটের পদক্ষেপের একটি নিয়মিত অংশ।

নিত্যব্যবহার্য পণ্যের ওপর এসব শুল্ক-কর বসালে ওই সব পণ্যের দাম বাড়ে। আবার প্রয়োজন বিবেচনা করে কিছু কিছু পণ্যের শুল্ক-কর কমানো হয়। এতে ওই সব জিনিসপত্রের দাম কমানোর সুযোগ থাকে। তাই বাজেটে কোন কোন পণ্যের ওপর শুল্ক-কর বসল কিংবা কমল, সেটাও অনেকের বেশ আগ্রহের বিষয় থাকে। এবার বিলাসপণ্যে শুল্ক-কর বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন বিলাসপণ্য ব্যবহার করেন, তা মিলিয়ে দেখবেন।

করমুক্ত আয়সীমা

আয়ের একটি অংশ সরকারকে দিতে হয়। প্রতিবছর বাজেটের মাধ্যমে আয়কর রিটার্নপ্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তাই বাজেট ঘোষণার সময় প্রথমেই একজন করদাতার কৌতূহল থাকে বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলো কি না, তা জানার। করমুক্ত আয়সীমা বাড়লে করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পান।

বর্তমানে বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা পেরোলেই রিটার্ন জমা ও কর দিতে হয়। কিন্তু বাজেটে যদি করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়। তাহলে অনেকের কর দিতে হবে না। এটি জিনিসপত্রের উচ্চমূল্যের বাজারে ওই করদাতাকে স্বস্তি দেবে। তাই বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ল কি না, তা বেশ আগ্রহের সঙ্গে দেখেন করদাতারা।

সেবায় ভ্যাট

প্রতিদিনের জীবনে নানা ক্ষেত্রে ভ্যাট দিতে হয়। কেনাকাটা, খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের সেবা নিতে গেলে ভ্যাট দিতে হয়। রেস্তোরাঁয় বসে খেতে যাবেন, সেখানেও ভ্যাট আছে। যেমন খাবারের বিলে এসি রেস্তোরাঁয় ১০ শতাংশ এবং বড় নন–এসি রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। বড় বিপণিবিতান থেকে পোশাক–আশাক কিনবেন, সেখানেও ভ্যাট বসবে।

যাতায়াতের ক্ষেত্রেও (বাস, ট্রেন, বিমানযাত্রা) অনেক সময় পরোক্ষভাবে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বসে। তাই বাজেটের সময় এসব খাতে ভ্যাট কমল নাকি বাড়ল—এসব বিষয়ে আগ্রহ থাকে সাধারণ মানুষের। ইন্টারনেট এখন নাগরিক জীবনে প্রায় অপরিহার্য হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ডেটা সেবা পেতে হলে বাড়তি শুল্ক-কর বসানো হলো কি না, তা নিয়েও বাজেটের সময় বেশ আগ্রহ দেখা যায়।

টিআইএন ও রিটার্ন জমায় পরিবর্তন

প্রতিবছর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিবছরই রিটার্ন জমায় কিছু বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়। যেমন বেসরকারি খাতের নির্বাহী পর্যায়ের চাকরিজীবীদের সবার রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আবার বিদ্যুৎ–সংযোগ নিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক। বাড়ির নকশা করতে গেলেও টিআইএন লাগে। নতুন বাজেটে এমন ধরনের নতুন কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না, তার খোঁজখবর রাখতে হয়। এত দিন শুধু টিআইএন সনদ দেখালেই বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যেত।

এখন রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কি না, সেটি দেখতে হবে। কারণ, দুই-তিন বছর ধরে রিটার্ন জমা না দিলে সরকারি সেবা মিলবে না, এমন শর্ত আরোপের চিন্তাভাবনার কথা বলছেন কর কর্মকর্তারা। রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক করদাতা রিটার্ন জমা দেন না। মনে করে দেখবেন, এবার রিটার্ন জমায় উৎসাহিত করতে বিশেষ কোনো সুযোগ দেওয়া হলো কি না।

বিনিয়োগ সুবিধা

বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করলে এ কর রেয়াত মেলে। বার্ষিক মোট আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত সুবিধা পান করদাতারা। নতুন বাজেটে দেখতে হবে, বিনিয়োগের খাত বাড়ানো হলো কি না বা বিনিয়োগসীমা বাড়ানো হলো কি না কিংবা করহারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কি না।

এ ছাড়া কমবেশি সবাই ব্যাংকে টাকা রাখেন। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ব্যাংক হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক কাটা হয়। এবার সেখানে কোনো পরিবর্তন হলো কি না, তা–ও খেয়াল রাখতে হবে। আবার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ ও সুদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে উৎসে কর বাড়ল বা কমল, তা–ও অনেকের কাছে জানার বিষয়।