তিন ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠান পেল ডিএইচএল-ডেইলি স্টার সম্মাননা
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদানের জন্য তিন ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে ২২তম বাংলাদেশ ব্যবসা পুরস্কার দিয়েছে বহুজাতিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। নিজ নিজ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অসামান্য প্রচেষ্টা ও অবদানের জন্য তাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে।
এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারপারসন কিহাক সাং। আর সেরা ব্যবসায়ীর স্বীকৃতি পেয়েছেন আকিজবশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেখ বশির উদ্দিন। সেই সঙ্গে বছরের সেরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে দেশের বৃহত্তম ইস্পাত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম। সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে পূবালী ব্যাংককে। এ ছাড়া সেরা নারী উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন গার্মেন্টস বায়িং হাউস ক্লথস ‘আর’আস লিমিটেডের এমডি কিয়াও সেন থাই ডলি।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস বাংলাদেশ লিমিটেডের এ দেশীয় ব্যবস্থাপক মো. মিয়ারুল হক ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম।
ডিএইচএল ও দ্য ডেইলি স্টার ২০০০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে।
আয়োজকেরা জানান, তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কাজ করা কোরিয়ান তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারপারসন কিহাক সাং বাংলাদেশের রপ্তানি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নে অবদান রেখেছেন। এ জন্য তাঁকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিএসআরএমের পক্ষে পুরস্কার নেন কোম্পানির চেয়ারম্যান আলীহোসাইন আকবরআলী এবং পূবালী ব্যাংকের পক্ষে পুরস্কার নেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অতীতে অনেক অর্থ অপচয় হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। সরকারি প্রকল্পে মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে খরচ অনেক বাড়ানো হয়েছে। আমরা এগুলো আর দেখতে চাই না।’ ব্যবসায়ীদেরও স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করার আহ্বান জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ সহজীকরণ করা আমাদের লক্ষ্য। ব্যবসার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা কাজ করছি। তবে ব্যবসায়ীদেরও স্বচ্ছ হতে হবে। টেবিলের নিচ দিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক–সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি বিশেষ সময় পার করছি। এ সময় আমাদের সামনে বিশেষ সুযোগও তৈরি হয়েছে। আমরা একটি দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করব। আশা করব, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও তাদের কাজের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল থাকবে।’
অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা নতুন ভবিষ্যতের এক দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। তবে সামনের পথ অনেক পিচ্ছিল। এ জন্য সব ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনা সবচেয়ে জরুরি।’
মাহ্ফুজ আনাম আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা অনেক ধরনের সমস্যার কথা বলছি। একই সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রেও সংস্কারের কথা বলা প্রয়োজন। যাঁরা নিয়ম মেনে ঠিকভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। আর যাঁরা সৎ ব্যবসা করছেন না, তাঁদেরও আলাদা করা প্রয়োজন। ব্যাংক ডাকাতি, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার—এগুলো সৎ ব্যবসায়ের পথে বাধা। আবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে অসৎ ব্যক্তিদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এসব জায়গায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।’
গত ১৫ বছরে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবসাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতাও হরণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী চেম্বারগুলোতে কীভাবে বাইরে থেকে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। ফলে চেম্বার নেতারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ না করে ক্ষমতার স্বার্থে কাজ করেছেন। ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়, এটা ঠিক। কিন্তু তাঁরা কোনোভাবেই সরকারের দাসে পরিণত হতে পারেন না।’
ডিএইচএলের এ দেশীয় ব্যবস্থাপক মো. মিয়ারুল হক বলেন, ‘দেশে অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন করা হলেও লজিস্টিক বা সরবরাহ খাত সেভাবে এগোয়নি। সরবরাহ খাতে আমাদের উন্নতি হচ্ছে, তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় তা অনেক পেছনে। ফলে আমাদের এই খাতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।’
ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারপারসন কিহাক সাং করপোরেট জগতে তাঁর কর্মজীবন শুরু থেকে একজন শিল্পপতি হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘৪৪ বছর ধরে আমি বাংলাদেশে কাজ করছি। এ দেশ আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছে। আরও অন্তত ৩৩ বছর এ দেশে কাজ করে যেতে চাই।’ কিহাক সাং আরও বলেন, ‘“সহনশীলতা” শব্দটি বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক মানানসই। বাংলাদেশ বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি আশাবাদী, বাংলাদেশ কখনো ব্যর্থ হবে না।’
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর রুবানা হক প্রমুখ।
এ ছাড়া ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, হা–মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, ট্রান্সকম গ্রুপের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ প্রমুখ।