ঢাকার বাজার
মোটা ও মাঝারি চালের দাম কমতির দিকে
আমদানির প্রভাবে বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে নাজিরশাইলের মতো বেশি দামের চালে কোনো প্রভাব নেই।
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হতেই বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে কমার পরে এবার ঢাকার খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে চালের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে খুচরায় কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। বেশি কমেছে মোটা চালের দাম। মাঝারি ও সরু চাল মানভেদে কেজিপ্রতি এক টাকা দেড় টাকা কমেছে। তবে নাজিরশাইলের মতো বেশি দামের চালে কোনো প্রভাব নেই।
গতকাল রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীরাও বলছেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে পাইকারিতে নওগাঁর বাজারে চালের দাম যতটা কমেছে, রাজধানীর বাজারে ততটা কমেনি।
সরকার জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ধাপে ধাপে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতি দেয়। গতকাল পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ৮৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। যার মধ্যে গত ৩০ আগস্টের পরে ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। জুলাই মাসে ডলারের বাজার বেশি অস্থিতিশীল থাকায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে আগ্রহ কম ছিল।
২৮ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়। চাল আমদানির মোট করভার ২৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা আবার চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এতে দেশের বাজারে চালের দাম একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না ইরির দাম দুই দিন আগেও খুচরায় প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ছিল। সেটা এখন ৫৩ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। ১০ কেজির বেশি কিনলে অনেক ব্যবসায়ী কেজিপ্রতি আরও এক টাকা কম রাখছেন। খুচরা বাজারে মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ৫৬ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে—দুই দিন আগে যা এক থেকে দেড় টাকা বেশি ছিল। বিআর–২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকার আশপাশে। সরু মিনিকেট চাল কম দামেরটা ৭০ থেকে ১ টাকা কমে ৬৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের আরও কয়েকটি ধরন রয়েছে, সেগুলোও পাইকারিতে কমতে শুরু করেছে। তবে কমেনি নাজিরশাইল চালের দাম। এটা আগের মতো ৭৫ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে রয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের ফরিদপুর রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানির প্রভাবে পাইকারিতে চাল আমরা এখন বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে কিনতে পারছি। খুচরা বাজারে যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে দাম আরও কমবে কি না, সেটা নির্ভর করছে আমদানি কতটুকু হচ্ছে, তার ওপর।’
প্রায় একই কথা বলছেন নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী বাংলাদেশ রাইস এজেন্সির মালিক মো. আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। সরু চালের ক্ষেত্রে প্রভাবটা কম, কেজিপ্রতি কমেছে ১ টাকা। তবে ভালো মানের সরু চাল ও সুগন্ধি চালের দাম এখনো কমেনি।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারত থেকে চাল আসা ছাড়াও দাম কমার আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন দফায় দফার বাজারে অভিযান, সারা দেশে দরিদ্রের জন্য ওএমএসের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিতরণ। এ ছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে পরিবার কার্ডধারীদের মাসে ১০ কেজি চাল দেওয়ার কর্থাবর্তা চলছে। সব মিলিয়ে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।
চালের দাম এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ কেজিপ্রতি আরও ১ থেকে ২ টাকা কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে মিলমালিকদের ফোন করে চাল চাইলেও তাঁরা সহজে দিতে চাইতেন না। এখন মিলমালিকেরা নিজেরা ফোন দিয়ে চাল বিক্রির জন্য সাধছেন।
চালের বাজার পড়তির দিকে উল্লেখ করে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারিতে চালের দাম কমেছে। আমদানি বাড়লে আরও কমবে। তবে সে ক্ষেত্রে মিলমালিকদের কিছুটা লোকসান গুনতে হতে পারে। কারণ, ধান থেকে চাল বানানোর খরচ এখনো বেশি পড়ছে।’
সরকারি সংস্থা টিসিবির তালিকাও বলছে, বাজারে চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় এখন কম। টিসিবির হিসেবে বাজারে এখন মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও তা ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। মাঝারি মানের চালের দামও কিছুটা কমতির দিকে। এক সপ্তাহ আগে মাঝারি মানের চাল প্রতি কেজি ৫৬ থেকে ৬৪ টাকা ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়।
নওগাঁর মোকামে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। সপ্তাহখানেক আগে মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে মাঝারি ও সরু চালের দাম। ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়ার যে প্রবণতা চলছিল, তা কমে গেছে।
রাজধানীর নিউমার্কেটে গতকাল দুপুরে চাল কিনছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন আহমেদ। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলছিলেন, আগে তাঁরা ভালো মানের সরু চাল খেতেন, যার দাম ছিল ৭০ টাকার মতো। দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ কমাতে তিনি এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে মাঝারি মানের চাল কিনে থাকেন। চালের দাম সামান্য কমলেও তিনি মাঝারি মানের চালই কিনবেন বলে প্রথম আলোকে জানালেন।