ব্যর্থতা ঢাকার জন্য রেস্তোরাঁয় অভিযান করা হচ্ছে, অভিযোগ মালিক সমিতির
একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেস্তোরাঁশিল্পের বিরুদ্ধে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে এবং কর্তৃপক্ষের ‘ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অভিযান’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সংগঠনটি মনে করে, ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা থেকে সরিয়ে পুঁজিপতিরা পুরো খাতের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। বেইলি রোডে ঘটা দুর্ঘটনার দায় শুধু রেস্তোরাঁমালিকদের ওপর না চাপিয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সমিতির নেতারা হয়রানি বন্ধ করে সমস্যা সমাধানে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেইলি রোডে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শোক প্রকাশ করতে আগামী বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রেস্তোরাঁয় কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের সাততলা যে ভবনে আগুন লাগে, সেটির একটি তলা ছাড়া বাকি সব তলায় রেস্তোরাঁ ছিল। ভবনটির জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ছিল না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি ওঠে। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেস্তোরাঁ ভবনে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশসহ সরকারি নানা সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান হাসান বলেন, ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে হলে একাধিক সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সব রেস্তোরাঁয় কিছু না কিছু সনদ থাকে। কারও কাছে কয়েকটি সনদ থাকলে সেই রেস্তোরাঁ অবৈধভাবে ব্যবসা করছে, তা বলার সুযোগ থাকে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁ ব্যবসা সম্ভবও নয়। এরপরও যদি কেউ আইনের ব্যত্যয় করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত তো হবেন, বেকার হবেন আরও অনেকে। ভবনের মালিকেরা ভাড়া বঞ্চিত হবেন।
ইমরান হাসান আরও বলেন, অনেক ছোট উদ্যোক্তা রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ছোট উদ্যোক্তা থাকবে না; বরং পুঁজিপতিদের হাতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলে যাবে। বেকারি খাত ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে চলে গেছে। এখন রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে বিতর্কিত করে, এই খাতেরও নিয়ন্ত্রণ নিতে চান তাঁরা। এটা শুভ লক্ষণ নয়।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মনে করে, এই খাতে যা ঘটছে, তাতে রেস্তোরাঁমালিকদের দায় আছে। তবে এককভাবে তাঁদের দায়ী করা ঠিক হবে না৷ ইমরান হাসান বলেন, ‘একটা ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলেই আমাদের টনক নড়ে। এর আগে সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। সরকার বছরের পর বছর রেস্তোরাঁ খাত থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স নিলেও এ খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো কাজ করেনি। এখন ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অভিযান করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এত দিন ঘুমিয়ে ছিলেন। সরকারের উচ্চমহলে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছি। বাণিজ্যিক ভবনে রেস্তোরাঁ করা যাবে না, এটা কোথাও লেখা নেই। ইমরান হাসান বলেন, ‘আমাদের এত দিন কিছু বলা হয়নি। এখন একটা সমস্যা হয়েছে, তাতে দায় আমাদের আছে, সবারই আছে। আলোচনা না করে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে এখন অভিযান করছে। তৈরি পোশাক খাতেও সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমাধানও হয়েছে। এমন উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমরা সহযোগিতা করব।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানিয়েছে, সারা দেশে ৪ লাখ ৮২ হাজার রেস্তোরাঁ আছে। এসব রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। ইতিমধ্যে ঢাকায় ৪০টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রেস্তোরাঁ খাতের বিনিয়োগ যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বেইলি রোডের নবাবী ভোজ নামের একটি রেস্তোরাঁর ১২টি সনদ থাকলেও সেটি বন্ধ করা হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি ওসমান গনি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান, নবাবী ভোজের মালিক লাবনী হাসনা চৌধুরীসহ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।