অস্ত্র আমদানিতে বিদেশি ব্যাংক সহায়তা করছে মিয়ানমারকে: জাতিসংঘ
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সামরিক সরকার আন্তর্জাতিক কিছু ব্যাংকের সহযোগিতা পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত। গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরে দেশটির সামরিক জান্তা ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনেছে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ।
তবে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন নাকচ করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। সরকারবিরোধী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য মিয়ানমার এখনো অর্থ ও প্রয়োজনীয় অস্ত্র পাচ্ছে, এই অভিযোগও অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি বলেছে যে তাদের তদারকির আওতায় যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে চলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে সামরিক সরকারের একটি সংবাদপত্রে। তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাতিসংঘের বিশেষ দূতের প্রতিবেদনের বিষয়ে কঠোর আপত্তি জানাচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন মিয়ানমারের বেসামরিক মানুষের স্বার্থ, মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশের মধ্যকার সম্পর্কের দারুণ ক্ষতি করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মানবাধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন যে দেশটি অস্ত্র, একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি ও অন্যান্য সরঞ্জাম গত মার্চ পর্যন্ত ১২ মাসে আমদানি করছে, যার মূল্য ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তিনি বলেন, যদিও মিয়ানমারের সামরিক সরকার যাতে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে না পারে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন চেষ্টা ছিল।
জাতিসংঘের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক কিছু ব্যাংকের সহায়তা পেয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের কিছু ব্যাংক।
নোবেল পুরস্কারজয়ী অং সান সু চি সরকারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তার পর থেকে সামরিক সরকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত চলছে। অন্যদিকে ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সরকার রীতিমতো সংগ্রাম করছে।
পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, ব্যাংক ও সহযোগী নানা ধরনের ব্যবসার ওপর অনেক ধরনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের ব্যবসায়ী সম্পর্ক ও লেনদেনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত নিয়মকানুনের ভেতর যেতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, যেসব আর্থিক লেনদেন হয়েছে, সেগুলো মিয়ানমারের বেসামরিক মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পণ্য আমদানির সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী, কৃষি ও পশুসম্পদ, সার, ভোজ্যতেল ও জ্বালানি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি ব্যয় এক কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে দেশটি থেকে মিয়ানমারের আমদানি ব্যয় ছিল ১১ কোটি ডলার। কিন্তু এই ঘাটতি আংশিকভাবে পূরণ করেছে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানি। ২০২৩ সালে তারা ১২ কোটি ডলারের অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। আগের বছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল এর অর্ধেক।
গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য বড় আর্থিক কেন্দ্রের মতো প্রটোকল মেনে চলে। তবে তারা এ-ও জানিয়েছে যে সরকার জাতিসংঘের বিশেষ দূতের প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখবে।