ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা চায় ঢাকা চেম্বার
ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও দুই লাখ টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের এই অন্যতম প্রধান সংগঠন। বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা।
আজ ঢাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক প্রাক্-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি মো. সামীর সাত্তার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার করহারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করের হার আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেন।
ওই অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ঢাকা চেম্বারের প্রস্তাব এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে পেশ করেন। ডিসিসিআইয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের জন্য এনবিআরের কাছে আয়কর, মূসক ও শুল্ক-সংক্রান্ত মোট ৩০টি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
এসব প্রস্তাবে সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়করের ব্যবস্থা, আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের আওতা বৃদ্ধি, আয়কর সংগ্রহে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, করব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন, স্থানীয় শিল্পায়ন উৎসাহিতকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয় ডিসিসিআই।
অনুষ্ঠানে সামীর সাত্তার উল্লেখ করেন, বর্তমানে ৩০ লাখ টিআইএনধারী আয়কর রিটার্ন দাখিল করে, যে কারণে দেশে কর-জিডিপির হার অনেক কম। এমন বাস্তবতায় আগামী ১০ বছরে করদাতার সংখ্যা এক-দুই কোটিতে উন্নীত করতে এনবিআরকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
এ ছাড়া আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর প্রদান-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সহজে সমাধানের লক্ষ্যে ‘ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইটিএএস)’ এবং ‘ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভিএএস)’ প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন সামীর সাত্তার। এ ছাড়া ভ্যাটের আওতাবহির্ভূত ব্যবসায়ের বার্ষিক টার্নওভারে ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
সামীর সাত্তার বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে আমানতের ওপর ১০-১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়, তাই আমানতের ওপর পুনরায় এক্সাইজ ডিউটি আরোপ আমানতের ব্যয় বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যাংকে সঞ্চয় নিরুৎসাহিত করে। তিনি এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।
কাস্টমস-সংক্রান্ত সব কাজ সহজ করতে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দেন ডিসিসিআই সভাপতি।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এইচএস কোড ব্যবহারে ভুল কমানোর লক্ষ্যে এনবিআরের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তবে ব্যবসায়ীরা চাইলে এনবিআর থেকে অগ্রিম রুলিং নিতে পারেন।
সামীর সাত্তার বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার প্রক্রিয়া সহজ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তবে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে এনবিআর সর্বদাই কঠোর অবস্থান থাকবে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’-এর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান।
ডিসিসিআই সহসভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর, সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।