সনাতন পদ্ধতির সোনা-রুপার অলংকার তৈরি ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। তারা বলেছে, ক্যাডমিয়াম পদ্ধতিতে শুধু ১৮, ২১, ২২ ও ২৪ ক্যারেটে অলংকার তৈরি ও বিক্রি করা যাবে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির সোনা-রুপার অলংকার শুধু ক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে পারবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি আরও জানিয়েছে, অলংকারের ক্ষেত্রে হল-মার্ক করা বাধ্যতামূলক। এই হল-মার্কে অলংকারে ব্যবহৃত সোনার গুণগত মান সম্পর্কে তথ্য থাকবে, যা লেজার মেশিন দিয়ে অলংকারের গায়ে খোদাই করে লেখা হবে।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) অলংকার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩ এমনটাই বলা হয়েছে। গত মাসে এটি প্রণয়ন করা হলেও আজ বৃহস্পতিবার সমিতি এই নির্দেশিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, সোনার অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমান ওজন থেকে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে নতুন অলংকারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান।
তবে ক্রেতার কাছ থেকে পুরোনো অলংকার কেনার ক্ষেত্রে অলংকারের বর্তমান ওজন থেকে ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্যে দাম পরিশোধ করবে। এ ছাড়া সোনার অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি গ্রামে কমপক্ষে ৩০০ টাকা মজুরি নিতে হবে।
যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। দ্বিতীয়বার এই নির্দেশনা ভঙ্গ করলে সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেবে সমিতি। জবাব সন্তোষজনক না হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি।
জুয়েলার্স সমিতির সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে বাজুসের স্টিকার ও হালনাগাদ সনদ দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। ঢাকা মহানগরের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টিকার, সনদ ও পরিচয়পত্রের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ জন্য ফি দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া সমিতির সদস্যপদ পেতে ঢাকা মহানগরের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ হাজার টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা।
সোনা-রুপার অলংকার বেচাকেনার নিয়ম
পুরোনো সোনার অলংকার কেনার ক্ষেত্রে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিক্রেতাকে রসিদ প্রদান করবে। সেই রসিদে বিক্রেতার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংরক্ষণ করতে হবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে। মূল মালিক ছাড়া কোনো প্রতিনিধির কাছ থেকে পুরোনো অলংকার কেনা যাবে না।
ব্যাগজ রুলসের আওতায় আনা সোনা ও অলংকার কেনার ক্ষেত্রে বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিতে হবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে ব্যাগজ রুলসের আওতায় আনা সোনা ও অলংকারের বিপরীতে পরিশোধ করা কর প্রদানের মূল সনদ সংরক্ষণ করতে হবে। অবশ্যই প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে সোনা কিনতে হবে।
এদিকে রুপার অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমান ওজন থেকে ৩০ শতাংশ বাদ দিয়ে নতুন অলংকারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। আর ক্রেতার কাছ থেকে পুরোনো অলংকার কেনার সময় অলংকারের বর্তমান ওজন থেকে ৪০ শতাংশ বাদ দিয়ে জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্যে দাম পরিশোধ করবে। অন্যদিকে রুপার নতুন অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি গ্রামে ২৬ টাকা মজুরি নিতে হবে।
প্রতারণা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে রুপার অলংকারের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই ইমিটেশন, মেটাল বা গোল্ড প্লেট করা অলংকার প্রদর্শন করতে পারবে না। এসব অলংকার আলাদাভাবে প্রদর্শন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় ও স্পষ্ট অক্ষরে অলংকারের ধরন উল্লেখ করতে হবে। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছে ইমিটেশন, মেটাল বা গোল্ড প্লেট করা অলংকার রুপার অলংকার হিসেবে বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিলসহ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডায়মন্ডের অলংকারে মূল্যছাড়
বর্তমানে ডায়মন্ড বা হীরার অলংকার বিক্রিতে একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম মূল্যছাড় দেয়। তবে জুয়েলার্স সমিতি নতুন নির্দেশনায় বলেছে, ডায়মন্ডের অলংকারে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দেওয়া যাবে। যদি কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম অমান্য করে, তাহলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে।
এ ছাড়া ডায়মন্ডের অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং ক্রেতার কাছ থেকে পুরোনো ডায়মন্ডের অলংকার কেনার সময় বর্তমান ওজন থেকে ২৫ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। ৫০ সেন্টের ওপর সব ডায়মন্ডের অলংকারের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সনদ দিতে হবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে। এ ছাড়া ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রির ক্যাশ মেমোতে ডায়মন্ডের রং, ক্যারেট ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে।
ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রিতে ক্রেতা আকর্ষণে কোনো ধরনের প্রলোভনমূলক উপহার বা একটা কিনলে একটা ফ্রি—এই ধরনের অফার দিতে পারবেন না। এমনকি কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান নকল ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রি করলে সদস্যপদ বাতিল ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বাজুসের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।