শুধু যুক্তরাজ্য নয়, অন্য দেশেও অর্থ পাচার হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, অন্য দেশেও অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এসব অর্থ দেশে ফেরাতে প্রয়োজনে যেকোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাম আর উল্লেখ করেননি অর্থ উপদেষ্টা। সরকার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় প্রথম একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছিল ২০১৫-১৯ সময়ের জন্য। এর নাম ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্স অব টেররিজম। পরে আরেকটি কৌশলপত্র করা হয় ২০১৯-২১ সময়ের জন্য। এর পর আর কৌশলপত্র হয়নি। আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী এ কৌশলপত্র তৈরি করাটা একটা চর্চা, যা প্রায় সব দেশই করে থাকে।
কৌশলপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হওয়া শীর্ষ ১০ দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ক্যামেন আইল্যান্ড এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড। কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্রসহ উন্নত কয়েকটি দেশ, যাদের ট্যাক্সহ্যাভেন বা কর ফাঁকির অভয়ারণ্য বলা হয়। এর মধ্যে শীর্ষ ১০-এ আছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, কেম্যান আইল্যান্ড, বারমুডা, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, হংকং, জার্সি, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার পাচার হয়। আর সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য কী ধরনের সহায়তা করবে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। এগুলো কারিগরি বিষয়। পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কাজ করছে।
দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়ন হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং এই পরিবেশ তৈরির জন্য দরকার আর্থিক খাতের সংস্কার—এমন মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার ব্যবসায়ের পরিবেশ আরও সহজ করতে চায়। এ জন্য সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কার করা হবে পুঁজিবাজার ও ব্যাংকসহ পুরো আর্থিক খাতে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। সে দেশের বড় বড় বাণিজ্য খাতও কাজ করবে বাংলাদেশে। এ ছাড়া শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও শিশু সুরক্ষায় কাজ করবে দেশটি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, উভয় দেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসায়ের পরিবেশের উন্নতি হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আর ব্যবসায়ের পরিবেশের উন্নয়নের জন্য যে ধরনের সংস্কার হাতে বাংলাদেশ হাতে নেবে, সেগুলোর পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য সরকার।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, আলোচনা হয়েছে কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমকে সমর্থন করতে পারে যুক্তরাজ্য। কীভাবে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়তে পারে সে ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।