বাংলাদেশে ‘টেকসই ডেইরি ভ্যালু চেইন মডেলে’ ডেনমার্কের অর্থায়ন

প্রকল্পের উদ্বোধনসংগৃহীত

‘গ্রিন ডেইরি পার্টনারশিপ ইন বাংলাদেশ—ক্রিয়েটিং আ সাসটেইনেবল অ্যান্ড প্রোডাক্টিভ ডেইরি ভ্যালু চেইন ইন সাউথওয়েস্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি দুগ্ধ প্রকল্পে প্রায় ২৫ দশমিক ৪ কোটি টাকা (২৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোনা) অর্থায়ন করল ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডানিডা গ্রিন বিজনেস পার্টনারশিপ (ডিজিবিপি)। ২৭ জুন ঢাকায় এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক এবং বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের হেড অব ট্রেড অ্যান্ড ডানিডা বিজনেস আলী মুশতাক বাটসহ প্রকল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা।

সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার পরিচালনায় এ প্রকল্পের প্রধান বাণিজ্যিক সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রাণ ডেইরি এবং সহযোগিতায় আরলা ফুডস বাংলাদেশ, আইডিআরএন-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেগেস ইনোভেশন এবং ডেনমার্ক অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কাউন্সিল।

আরলা ফুডস ও সেগেস ইনোভেশন প্রবর্তিত টেকসই দুগ্ধ খামারব্যবস্থা ‘বিগ ফাইভ’ স্থানীয়করণ করে লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের মাধ্যমে প্রকল্পটি প্রাণ ডেইরিকে বাণিজ্যিকভাবে সহায়তা প্রদান করবে। বিগ ফাইভ-ব্যবস্থাটির মূল পাঁচটি অংশ—গরুর জন্য কার্যকর খাদ্য, খাদ্য সামঞ্জস্যতা, পশুর সুস্থতা, সার ব্যবস্থাপনা এবং জমির কার্যকর ব্যবহার। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২৫ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস এবং বাকি ৫ শতাংশ জ্বালানি, খাদ্যবর্জ্য এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পটির সামগ্রিক কার্যকারিতা ও ফলাফল ব্যবস্থাপনা করবে আইডিআরএন ও সেগেস ইনোভেশন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি টেকসই ও কার্যকর দুগ্ধব্যবস্থা তৈরি করতে প্রাণ ডেইরি নিবিড়ভাবে খামারিদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এই টেকসই প্রকল্পের অংশ হিসেবে আমরা গরুর জন্য কার্যকর খাদ্য, খাদ্য সামঞ্জস্যতা, পশুর সুস্থতা, সার ব্যবস্থাপনা ও জমির কার্যকর ব্যবহার নিয়ে খামারিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করছি।’

আরলা ফুডসের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবিলিটি আইরিন কুইস্ট মরটেনসেন বলেন, ‘প্রবর্তক হিসেবে এই প্রকল্পের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমাদের বিশ্বাস, এর ফলাফল হিসেবে দুগ্ধশিল্পের স্বয়ংসম্পূর্ণতা, ব্যক্তির স্বয়ংসম্পূর্ণতা, কর্মসংস্থান, সমতা ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে আমরা বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যমাত্রার সহায়ক হতে পারব।’

সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় একটি অপরিহার্য অংশ হবে নিরাপদ ও টেকসই খাদ্য। এরই আওতায় এই প্রকল্প খামারি ও বেসরকারি খাতের জন্য মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য একটি বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর উপায় নিয়ে আসছে, যা কার্বননিরপেক্ষ হবে।’

উল্লেখ্য, একটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এ প্রকল্প ৩০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস এবং ১০ হাজার গৃহস্থালি খামারির আয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে। গৃহস্থালি খামারির সংখ্যা ৫০ হাজারে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনাও রয়েছে এই প্রকল্পের। এ ছাড়া পাঁচ বছরব্যাপী এ প্রকল্পের খামারিদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী খামারি হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে প্রকল্পটি দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণকে সহজতর করার পাশাপাশি বাজারে আরও টেকসইভাবে উৎপাদিত দুগ্ধজাত পণ্য প্রবর্তন করবে।