ক্যাশলেস লেনদেনে কেনাকাটায় স্বস্তি
রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর। এই আসর ঘিরে বছরজুড়ে অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পণ্য কিংবা শৌখিন পণ্য কেনার জন্য। বছরজুড়ে কেনাকাটার ফর্দ করে রাখেন, মেলা থেকে কিনবেন বলে।
অপেক্ষার প্রহর শেষে সবাই এখন কেনাকাটায় মেতেছেন বাণিজ্য মেলায়। তবে এবারের মেলায় দেখা গেল ভিন্ন রূপ। ক্রেতারা লেনদেনে ব্যবহার করছেন ডিজিটাল মাধ্যম। অর্থাৎ ক্যাশলেস পেমেন্টে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন মানুষ।
বাণিজ্য মেলায় নিজের প্রয়োজনীয় ফর্দ ধরে কেনাকাটা করেছেন কামরুজ্জামান। সব শেষে বাজেটের বাইরে একটি ব্লেজার পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। মানিব্যাগে ক্যাশ টাকা নেই। তবুও তিনি চিন্তিত হননি। কারণ, তাঁর মুঠোফোনে আছে ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা। তাই সহজেই কিনে ফেললেন পছন্দের ব্লেজারটি।
কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি আমার মুঠোফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা রাখি। কারণ, সঙ্গে বেশি পরিমাণ ক্যাশ নিয়ে চলাফেরা ঝামেলার। শুধু মেলার জন্যই নয়, কেনাকাটায় সব সময় আমি মুঠোফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনই ব্যবহার করি। এতে নানা সুবিধা হয়। আবার অনেক সময় ডিজিটাল লেনদেনে ভালো ভালো অফার থাকে। তখন সেই অফারগুলো সহজেই আমি উপভোগ করতে পারি।’
শুধু কামরুজ্জামানই নন, সরেজমিন দেখা গেল, মেলায় কেনাকাটা করতে আসা অধিকাংশ মানুষই এবার লেনদেন করছেন নগদবিহীন। মুঠোফোনের ডিজিটাল লেনদেনে ক্যাশলেস কেনাকাটাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন ক্রেতারা। রাজধানীর মগবাজার থেকে সায়কা আঞ্জুম এসেছেন কিছু বিদেশি ক্রোকারিজ কিনতে।
গৃহস্থালি এই শখের জিনিসগুলো প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা থেকেই সংগ্রহ করেন তিনি। সায়কা বলেন, ‘আমি মূলত গৃহস্থালি পণ্য কিনতেই আসি। যেহেতু টাকা বহনের সমস্যা, তাই গত বছর থেকে আমি ক্যাশলেস কেনাকাটা করছি। মুঠোফোনে বিকাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যালেন্স রাখি। সেটা থেকেই লেনদেন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘খুশির বিষয় হচ্ছে, ক্যাশলেস এই লেনদেনে আবার ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়, যা বাড়তি কিছু কেনার সুযোগ করে দেয়। টাকাও বহন করতে হলো না, আবার কিছু ডিসকাউন্টও পাওয়া গেল! আমি এবং আমার পরিবার আনন্দিত।’
টাকা হারানো, ক্যাশ টাকা বহনের ঝামেলা, খুচরা কিংবা ছেঁড়া টাকার বিড়ম্বনা থেকে যেমন ক্রেতারা পাচ্ছেন স্বস্তি, তেমনি ক্যাশলেস লেনদেনে খুশি বিক্রেতারাও। বাণিজ্য মেলায় হাতিল ফার্নিচারের শোরুম ইনচার্জ জানান, ‘ক্যাশলেস লেনদেনের কারণে কেনাকাটা খুব সুন্দর হচ্ছে। এ কারণে নিরাপদে-নিশ্চিন্তে তাঁরা ফার্নিচারসহ সবকিছু কিনতে পারছেন। আমাদের বিক্রিও হচ্ছে ভালো।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যাতায়াত, কেনাকাটা বা যেকোনো ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ এখন ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেন-ব্যবস্থার পথে এগোচ্ছে। কোভিড মহামারির সময়টা এই ক্যাশলেস হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল। উন্নত দেশগুলো এখন কাগুজে নোটের বদলে ক্যাশলেসের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গৃহস্থালি পণ্য কেনাকাটা, বিভিন্ন পরিষেবার বিল, মোবাইল রিচার্জ, রেস্টুরেন্টের বিল দেওয়া, পরিবহন ভাড়া, ইত্যাদি খুব সহজেই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাচ্ছে, যা জীবনকে করছে সহজ ও স্বস্তির।
দেশে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার বৃদ্ধির লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ। ক্যাশলেস কেনাকাটার বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘বিকাশ তার যাত্রার শুরু থেকে যেটা মাথায় রেখেছে, তা হলো, প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে জীবনকে আরও সহজ করে তোলা যায়। ক্যাশলেস লেনদেনে আমরা দেখেছি, মানুষ আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হচ্ছেন। যত বেশি আমাদের জীবনযাত্রায় ডিজিটাল পেমেন্টকে অভ্যস্ত করতে পারব, ততই জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। সহজ, নিরাপদ এবং গ্রাহকের আস্থা তৈরি হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’