সিপিডির সমালোচনা করলেও কেউ এড়িয়ে যেতে পারেননি: ফাহমিদা খাতুন

সিপিডির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি আয়োজন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগকে (সিপিডি) সমালোচনা করলেও কেউ তাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এই গবেষণা সংস্থাটির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মসূচির ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশনে ফাহমিদা খাতুন এমন মন্তব্য করেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, জনগণের জন্য নীতি তৈরিতে সরকারকে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ দেওয়ার লক্ষ্যে সিডিপি প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যভিত্তিক পর্যালোচনা কার্যক্রম শুরু করে। তবে এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সিপিডিকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হতে হয়। তবে তাদের এ কার্যক্রমকে কখনো উপেক্ষা করা হয়নি। বরং বাজেট প্রণয়ন থেকে শুরু করে মুদ্রানীতি, শ্রমিক ইস্যুসহ বিভিন্ন সময় তাদের অনেক সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়েছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সিপিডির ট্রাস্টি রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, সিপিডির হাত ধরেই সংস্কারের দাবি শুরু হয়েছিল। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অর্জন থাকলেও ভবিষ্যতে সংস্থাটির কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। অর্থনীতি-রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক খাত নিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত নিয়ে তেমন তথ্য-উপাত্ত নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নসহ ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে জিডিপিতে কী ক্ষতি হচ্ছে, এ নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার।

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বিভিন্ন ধরনের ঝামেলায় পড়েন। নিজস্ব জেট আছে এমন অনেক বাংলাদেশি চিকিৎসক বিদেশে কাজ করেন। করোনা মহামারির সময় ৫০ লাখ ভ্যাকসিন ও সাড়ে ৩০০ ভেন্টিলেটর দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সরকারের কাছে এদের স্বীকৃতি নেই। এমনকি দেশের জন্য কিছু করতে চাইলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রবাসীরা তা করতে পারছেন। কোটি কোটি টাকা তাঁরা দিতে চাইলেও এনজিও ব্যুরোর বাধায় তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন খাত নিয়ে আরও গভীরভাবে গবেষণা করা দরকার। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনশীল মুদ্রানীতি চলমান রয়েছে। কিন্তু এ পদ্ধতি অনেকটা অকেজো হয়ে যাচ্ছে। সুদহার বাড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব নয়। কারণ, ওই সব দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি কর্মসংস্থাননির্ভর হলেও বাংলাদেশে সে রকম অবস্থা নয়। চাহিদা কমায় দেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমছে।

আবু আহমেদ আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে শুধু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়ন না করে দেশের অর্থনৈতিক ধারা আমলে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক দেশ গরিব হয়ে গেছে।

সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম সাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ, সাবেক অর্থসচিব সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।