রাজউকের ফ্ল্যাট কিনলেও ‘ইজারা’, নিবন্ধনে দিতে হবে ৪% উৎসে কর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনফাইল ছবি

ধরুন, আপনি উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প থেকে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সি ব্লকের ওই ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৬৫৪ বর্গফুট। মূলত রাজউক আপনাকে ৯৯ বছরের জন্য ওই ফ্ল্যাট ‘ইজারা’ দিয়েছে। ইজারা মূল্য বাবদ আপনি কিস্তিতে এক কোটি টাকা পরিশোধ করে ফ্ল্যাটের ইজারা দলিল নিবন্ধন করেছেন। আপনাকে এখন ইজারা মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে ৪ লাখ টাকা উৎসে কর দিতে হবে। তা না হলে সাবরেজিস্ট্রি অফিস দলিল নিবন্ধন করবে না।

আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এবিসি লিমিটেড নামের একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি শিল্প প্লট নিয়েছে। ৫০ বছরের জন্য এই প্লট ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্লট বা জমির ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে নিবন্ধন করার সময় চার কোটি টাকা উৎসে কর দিতে হবে। এই অর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সরকারি কোষাগারে জমা দেবে।

গতকাল রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটার বিষয়টি স্পষ্ট করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ওপরের দুটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ১০ বছরের বেশি মেয়াদে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জমি, ফ্ল্যাট, প্লট বা অন্য স্থাবর সম্পত্তি ইজারা দেওয়া হয় কিংবা কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলে বা শিল্পনগরীর জমি উন্নয়ন করে বিনিয়োগকারীর অনুকূলে ইজারা দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে নিবন্ধনকালে ইজারা মূল্যের ৪ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে। ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ১২৮ ধারা অনুসারে এই উৎসে কর প্রযোজ্য হবে। তবে ১০ বছরের কম সময়ের জন্য ইজারা দেওয়া হলে কিংবা হস্তান্তরকারী ইজারাদার না হলে এই উৎসে কর প্রযোজ্য হবে না। ফলে ১০ বছরের বেশি সময়ের জন্য প্লট, ফ্ল্যাট, জমি ও স্থাবর স্থাপনা ইজারা নিলে কর দিতে হবে।

এনবিআর করনীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি ফ্ল্যাট ও প্লট কিনে নিবন্ধনকালে উৎসে কর কাটা নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সরকারি সম্পদ ইজারা দেওয়া হয়। তাই এই জটিলতা নিরসনে এনবিআর নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করল। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে এই স্পষ্টীকরণ প্রজ্ঞাপন নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ও রাজউক চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে।

রাজউকের উত্তরা প্রকল্প থেকে ফ্ল্যাট কেনা একজন গ্রহীতা প্রথম আলোকে জানান, ‘যখন ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ করেছিলাম, তখন এই ধরনের ইজারা মূল্যের ওপর উৎসে কর কাটার কথা শুনিনি। এখন শুনলাম, উৎসে কর কাটা হবে।’