সমস্যা সমাধানে এবার পর্ষদ সভা ডেকেছে ন্যাশনাল ব্যাংক
বিভিন্ন ঋণ অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ খালি থাকার প্রেক্ষাপটে পরিচালনা পর্ষদের সভা ডেকেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। আগামীকাল সোমবার বিকেলে ব্যাংকটির পর্ষদ সভা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এর আগে ২৬ ডিসেম্বর সর্বশেষ ব্যাংকটির পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একটি সভা হয় নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার জন্য।
ন্যাশনাল ব্যাংকের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার গত ১০ ফেব্রুয়ারি মারা যান। ২৪ ফেব্রুয়ারি নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। ২৬ ডিসেম্বরের পর কোনো পর্ষদ সভায় ঋণ অনুমোদন না হলেও বিতরণ ঠিকই অব্যাহত আছে। এ ছাড়া প্রায় এক বছর ধরে নির্বাহী কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
ফলে ব্যাংকটির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর মূলত তাঁর ছেলেরা ব্যাংকটি পরিচালনা করছেন। বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন ব্যাংকটির কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ ডিসেম্বরের পর অনুষ্ঠিত সব পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির সভার পূর্ণাঙ্গ কার্যবিবরণী জমা দিতে বলেছে। এ ছাড়া ২৬ ডিসেম্বরের পর সব ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে এবং এ সময়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত না হলে সব ঋণের অনুমোদন ও বিতরণ স্থগিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠিতে আরও বলেছে, রংধনু বিল্ডার্স, দেশ টিভি, রূপায়ন ও শামান্তা এন্টারপ্রাইজের সব ঋণের নথিপত্র (ঋণ আবেদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত) এবং সব ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। এরপর ব্যাংকটি সব তথ্য জমা না দিলে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরপর ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুলকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মধ্যে ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও সাংসদ পারভীন হক সিকদার জরুরি ভিত্তিতে নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার জন্য চিঠি দেন। পরে সভাটি প্রত্যাহারও করেন। এর মধ্যে কাল সোমবার পরিচালনা পর্ষদের সভা আহ্বান করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কালকের সভায় নতুন এমডি নিয়োগ ও বেশ কিছু ঋণের অনুমোদন হতে পারে। এ ছাড়া তিন মাস ধরে যেসব জরুরি ফাইল আটকে আছে, তার অনুমোদন হতে পারে।
জানতে চাইলে পারভীন হক সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে পরিচালনা পর্ষদের সভা ডাকার কোনো চিঠি আসেনি। হয়তো আসবে, এলে অনলাইনে যোগ দেব।’
পারভীন হক সিকদার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়েছে, আপনারা রিপোর্ট করেছেন। এ জন্য জরুরি নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছিলাম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত বিঘ্ন হতে পারে, এ জন্য সভাটি বাতিল করেছি। আমি সিকদার মেডিকেল ও ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত না। ২০০৪ সালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন ৯৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়। আমি কখনো কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’
ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক, যার ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০০৯ সালে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদেরও বদল হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের। ব্যাংকটির কর্তৃত্ব চলে যায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে। এরপর অন্য সব পরিচালককে কৌশলে বের করে দেওয়া হয়। নিজের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পর্ষদে যুক্ত করে ব্যাংকটির একক নিয়ন্ত্রণ নেয় সিকদার পরিবার। এরপর থেকেই প্রথম প্রজন্মের এ ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করে।