মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বন্ধ দুয়ার খুলছে
বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ ও ইউক্যাশের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন সুবিধা চালু হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ব্যাংকও।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এতে সেবার মাশুলও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।
গ্রাহক পর্যায়ে এখনই নতুন কোনো মাশুল চাপবে না। তবে টাকা উত্তোলনের খরচ থাকছে আগের মতোই।
অবশেষে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি বা পারস্পরিক লেনদেন সুবিধা চালু হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ব্যাংকও। ফলে বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ ও ইউক্যাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন না হওয়ার যে অভিযোগ ছিল, তা দূর হচ্ছে। খুলে যাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বন্ধ দুয়ার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এতে এই সেবার মাশুলও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে এখনই নতুন করে কোনো মাশুল চাপবে না। তবে টাকা উত্তোলনের খরচ থাকছে আগের মতোই।
জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ পেলেই এ সুবিধা চালু করা হবে।’
বর্তমানে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়। কিন্তু এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠানো যায় না। সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের (এনপিএসবি) মাধ্যমে নতুন সেবাটি চালু করা হচ্ছে। এর ফলে এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএস ও ব্যাংকে অথবা ব্যাংক থেকে যেকোনো এমএফএসে সহজেই টাকা পাঠানো যাবে।
এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে রকেট এখনই যুক্ত হচ্ছে না। আগামী বছরের শুরুতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নতুন এই সেবায় খরচ যৌক্তিক করতে হবে।
তবে প্রথম দিকে সব এমএফএস ও ব্যাংক এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছে না। শুরুতে সবচেয়ে বড় অপারেটর বিকাশ, ইসলামী ব্যাংকের এম ক্যাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট সেবা এতে যুক্ত হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর মধ্যে যুক্ত হচ্ছে পূবালী ব্যাংক।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে রকেট এখনই যুক্ত হচ্ছে না। আগামী বছরের শুরুতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নতুন এই সেবায় খরচ যৌক্তিক করতে হবে।
ব্যাংক, এমএফএস ও গ্রাহক—তিন পক্ষই যাতে উপকৃত হয়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
অবশ্য বিকাশ, রকেট ও নগদ ইতিমধ্যে নিজেরাই ব্যাংক থেকে টাকা গ্রহণের সুবিধা চালু করেছে। আর বিকাশ থেকে দি সিটি, ব্র্যাক ও অগ্রণী ব্যাংকে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। নতুন সেবা পুরোপুরি চালু হলে ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে টাকা পাঠানো নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না। মাশুলও একসময় কমে আসবে।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাসুদুল বারী এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সব ব্যাংকের সঙ্গে এই সেবা চালু করেছি। এমএফএসের সঙ্গে চালু হলে ভালো হবে। এতে সবাই উপকৃত হবে। ভবিষ্যতে ইসলামিক ওয়ালেটের মাধ্যমে ছোট ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিকাশ বা যেকোনো এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠাতে কোনো খরচ গুনতে হবে না। তবে যখন ওই টাকা উত্তোলন হবে, তখন আগের মতো মাশুল দিতে হবে। মাশুল সুবিধা পাওয়া এমএফএস কিছু অংশ ভাগাভাগি করবে যে এমএফএসের মাধ্যমে ওই টাকা জমা হয়েছিল তার সঙ্গে। তবে ঠিক কী পরিমাণ টাকা ভাগাভাগি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিকাশ বা যেকোনো এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে টাকা পাঠাতে কোনো খরচ গুনতে হবে না। তবে যখন ওই টাকা উত্তোলন হবে, তখন আগের মতো মাশুল দিতে হবে। মাশুল সুবিধা পাওয়া এমএফএস কিছু অংশ ভাগাভাগি করবে যে এমএফএসের মাধ্যমে ওই টাকা জমা হয়েছিল তার সঙ্গে। তবে ঠিক কী পরিমাণ টাকা ভাগাভাগি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একইভাবে ব্যাংক থেকে এমএফএসে টাকা জমা করতে কোনো খরচ হবে না। তবে এমএফএস থেকে ব্যাংকে টাকা জমা করার ক্ষেত্রে মাশুল গুনতে হবে। বর্তমানে বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা জমা করতে প্রতি হাজারে ২০ টাকা দিতে হয়। এই খরচ অবশ্য কমে আসতে পারে।
সূত্র জানায়, নতুন এই সেবার মাশুল আরোপ ও ভাগাভাগি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে। তবে সুবিধাটি চালুর জন্য এমএফএসগুলোকে অনেক আগেই সময় বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইউক্যাশের প্রধান সাইদুল এইচ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নতুন এই সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের প্রায় ১৮ লাখ গ্রাহক রয়েছে।’ ইউক্যাশ নতুন নামে বাজারে আসছে বলে জানান তিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে গেছে। এখন ঘরে বসেই এসব সেবার হিসাব খোলা যাচ্ছে। টাকাও আনা যাচ্ছে ব্যাংক হিসাব থেকে। আর কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন সুবিধা মিলছে ঘরে বসেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্ট শেষে এমএফএসের গ্রাহক ৯ কোটি ২৯ লাখে উঠেছে, আর এজেন্ট ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। আগস্টে লেনদেন হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। আগস্টে এমএফএসের মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা প্রবাসী আয় বিতরণ হয়েছে, বেতন-ভাতা পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। কেনাকাটা হয়েছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা। গ্যাস-বিদ্যুতের মতো পরিষেবা বিল পরিশোধ হয়েছে ৯০৮ কোটি টাকা।