ডিআরইউতে সালমান এফ রহমান
ভবিষ্যতে অনেক ব্যাংক একীভূত করতে হবে
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, জিএমজি বন্ধ না করলে ভারতের কিংফিশারের মতো অবস্থা হতো।
বন্ধ হয়ে যাওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান জিএমজি এয়ারলাইনস ও বেক্সিমকো সিনথেটিকস নিয়ে কথা বলেছেন গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, সময়মতো জিএমজি এয়ারলাইনস বন্ধ করা না হলে বেক্সিমকো গ্রুপের অবস্থাও ভারতের কিংফিশারের মতো হতো।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জিএমজি এয়ারলাইনস নেওয়ার পর তেলের দাম বেড়ে যায়। এ জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। সময়মতো এটি বন্ধ না করলে তার প্রভাব বেক্সিমকো গ্রুপের ওপর পড়ত। জিএমজির প্লেসমেন্ট শেয়ারে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছিল, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
এ ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হয়ে যাওয়া আরেক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো সিনথেটিকসের বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে চাই। কী পদ্ধতিতে টাকা ফেরত দেব, তা স্টক এক্সচেঞ্জ জানালেই আমরা সেভাবে টাকা ফেরত দেব। এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের পাওনা সব মিলিয়ে ১৮-২০ কোটি টাকা হবে।’ জিএমজি এয়ারলাইনস ও বেক্সিমকো সিনথেটিকসের শেয়ারে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে আছে।
১৯৯৮ সালের ৬ এপ্রিল জিএমজি যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালে জিএমজির সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। এরপর প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি শুরু করে। ২০১২ সালের ৩০ মার্চ জিএমজি সব ফ্লাইট বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপুল লোকসানে পড়ে ভারতের বিমান পরিবহন সংস্থা কিংফিশার। ফলে বেশ কিছু গন্তব্যে উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়। পরে ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে গ্রুপটি। একপর্যায়ে ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান কিংফিশারের মালিক বিজয় মাল্য।
এদিকে ডিআরইউর ধারাবাহিক আয়োজন মিট দ্য রিপোর্টার্সের গতকালের অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান কিছু বক্তব্য নিজে থেকে তুলে ধরেন, আবার সাংবাদিকদেরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে না কারণ, অর্থনীতি বড় হয়েছে। বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করতে পারলে অর্থায়নে ব্যাংকনির্ভরতা কমবে। তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কম। আর রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে বেশি। খেলাপি ঋণের কমবেশি থাকবেই। ভবিষ্যতে অনেক ব্যাংককে একীভূত করতে হবে। কারণ, কিছু ব্যাংকের মূলধন অনেক কম।
শেয়ারবাজার বিষয়ে সালমান রহমান বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারের লেনদেনের ৮০ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীর। বাকি ২০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ৮০ শতাংশ বিনিয়োগই প্রাতিষ্ঠানিক। আমাদের শেয়ারবাজারের এটা একটা দুর্বলতা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসি কাজ করছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে আমাদের না বাড়িয়ে উপায় নেই। কতদিন ভর্তুকি দেওয়া যায়? তবে আশা করছি, দাম আবার কমে আসবে। করোনার টিকা আমদানি নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বেক্সিমকো যখন করোনার টিকা আমদানির চুক্তি করে, তখন ওই টিকা অনুমোদনও পায়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন অগ্রিম বুকিং দিতে। যখন আমরা টিকা পাই, তখন কানাডা, আমেরিকা ও ইউরোপেও টিকা দেওয়া শুরু হয়নি। আগামী বছরের শুরুতে সেরাম থেকে বাকি টিকা পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত সরকার যত টিকা আমদানি করছে, তার মধে৵ সেরামের টিকার মূল্য সর্বনিম্ন।’
টিকার উৎপাদন নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ইনসেপটা চীনের সঙ্গে টিকা উৎপাদনের চুক্তি করেছে। বেক্সিমকো আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করবে। তাঁর আশা, আগামী বছর বাংলাদেশে করোনার টিকা উৎপাদন শুরু হবে।
ছাপা পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, চলতি বছরেই দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে, এটা ছাপা ও অনলাইনে থাকবে, নাকি শুধু অনলাইন চলবে। এই পত্রিকার সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। আবার বিভিন্ন পক্ষ এমনকি তথ্যমন্ত্রীও চান না, পত্রিকাটির ছাপা বন্ধ হয়ে যাক। একটি পত্রিকা চালু রাখতে আর্থিক সক্ষমতার দিকটিও দেখতে হয়। প্রসঙ্গত, ইংরেজি দৈনিক দি ইনডিপেনডেন্ট বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।