ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) ঋণের তালা বাংলাদেশ ব্যাংক খুলে দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটিকে একজন গ্রাহককে ঋণ প্রদানের যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেটিও তুলে নিয়েছে। ফলে ব্যাংকটি এখন সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। পাশাপাশি গ্রাহককে ইচ্ছামতো বড় অঙ্কের ঋণও দিতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়েছে।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেবল ঋণ দেওয়ার অনুমতি পেয়েছি। এ জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে ছোট অঙ্কের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’
বেনামি ঋণ ঠেকাতে গত বছরের ৩ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সব মিলিয়ে ছয় ধরনের শর্ত আরোপ করে। ফলে আমানত সংগ্রহ, ঋণ আদায় ছাড়া ব্যাংকটির আর কোনো কার্যক্রম ছিল না। ফলে আট মাস ধরে ব্যাংকটি বিভিন্ন আমানত পণ্য চালু করে। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমানত পায়। ফলে ব্যাংকটিতে ঋণ ও আমানতের অনুপাতে উন্নতি ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। অবশ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ব্যাংকটির বিভিন্ন গ্রাহকের পক্ষ থেকে চাপ ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এনবিএলের এমডিকে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ঋণ ও আমানতের অনুপাত ৮৭ শতাংশে না আসা পর্যন্ত কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত ছিল। সেই বিধিনিষেধ রহিত করা হলো। পাশাপাশি বড় অঙ্কের ঋণ ও একক গ্রাহকের ঋণসীমাও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেটিও তুলে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ হবে বড় ঋণের সীমা। আর একক গ্রাহকের ঋণসীমা হবে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ।
তবে সদ্য বিদায়ী বছরের ৩ মে যে ছয়টি শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, তার চারটি এখনো বহাল আছে। সেগুলো হলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এনবিএল অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ঋণ অধিগ্রহণ করতে বা কিনতে পারবে না, ঋণ ও অগ্রিমের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না, শীর্ষ ২০ ঋণগ্রহীতার ঋণ আদায়ের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া উপদেষ্টা, পরামর্শক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিম্নতর দুই পদে নিয়োগ দিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। এসব শর্তের ফলে ব্যাংকটি এখনো ইচ্ছামতো সব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। শুধু ঋণ দিতে পারবে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শীর্ষ ২০ গ্রাহকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো এস আলম গ্রুপ, মায়শা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সাদ মুসা, নাফ ট্রেডিং, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, এফএমসি ডকইয়ার্ড, প্রাণ-আরএফএল, ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল ও ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আট মাস ঋণ বন্ধ থাকায় ব্যাংকটির অবস্থা আর খারাপ হয়নি। ব্যাংকের কর্মীরাই চাইছে ঋণ বন্ধ থাকুক। এরপরও ঋণ প্রদানের যে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, তা কয়েকজন বড় গ্রাহকের চাপে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এদিকে ব্যাংকটিতে আবারও নতুন করে বেনামে ঋণ বিতরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সদ্য বিদায়ী বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক মোট ২৪৮ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। অথচ আগের বছরে, অর্থাৎ ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফার পরিমাণ ছিল ৯২০ কোটি টাকা। শুধু তা–ই নয়, ন্যাশনাল ব্যাংক একসময় দেশের পুরো ব্যাংক খাতের শীর্ষ তিন মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংকের একটি ছিল।