এক লাখ কোটি টাকা করে প্রতিবছর আমানত বাড়ছে

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।

অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও দেশের ব্যাংক খাত বড় হচ্ছে। বছর বছর বাড়ছে আমানতের পরিমাণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঋণও। ১০ বছরে আমানত-ঋণ-দুটোই বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। প্রতিবছর এক লাখ কোটি টাকা করে আমানত বাড়ছে। আর ব্যাংক খাতে মোট আমানতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি জমা হচ্ছে স্থায়ী হিসাবে (এফডিআর)।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন ৯ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে আমানতের তথ্য ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ঋণের তথ্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উল্লেখ রয়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের আমানত ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে আনলে আমানতের পরিমাণ ঋণের চেয়েও বাড়বে।

করোনার সময়েও যে আমানত বেড়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে সমীক্ষায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন করোনা শুরু হয়, তার তিন মাস পর একই বছরের ৩০ জুন ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা; ঠিক এক বছর আগে যা ছিল ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা; অর্থাৎ ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বেশি।

সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ জুন আমানতের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ বছরে আমানত বেড়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ১৫ কোটি টাকা। বছরে গড়ে ১ লাখ কোটি টাকা করে আমানত বাড়ছে। একই হারে ঋণও বেড়েছে।

সমীক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের ঋণের উল্লেখ আছে। যেমন বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ঋণ ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা ও বেসরকারি খাতে ঋণ ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে এবং বিশ্বের ৩২তম অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ, ফলে আমানত-ঋণ বৃদ্ধির এ চিত্র ভালো লক্ষণ। তবে এটা আরও বাড়ত, যদি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা থাকত বা এ খাত থেকে তছরুপ কম হতো।

‘আমি সুদের হার বেঁধে দেওয়ার পক্ষপাতী নই’, এমন মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণ কিছু জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে এবং এ কারণে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।

এফডিআর থেকেই এক-তৃতীয়াংশ আমানত

সমীক্ষা প্রতিবেদনে ব্যাংকে ১৪ ধরনের আমানত রাখার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত আসে এফডিআর থেকে। এফডিআরের আছে পাঁচটি শ্রেণি। এগুলো হচ্ছে তিন থেকে ছয় মাস, ছয় মাস থেকে এক বছর, এক থেকে দুই বছর, দুই থেকে তিন বছর ও তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য আমানত। এগুলোতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা।

এফডিআরগুলোর মধ্যে ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৭ কোটি টাকাই তিন থেকে ছয় মাস সময়ের জন্য। এক থেকে দুই বছরের জন্য আমানত ২ লাখ ২০ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ(এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন গতকাল বলেন, ‘আমানত বেশি, ঋণ কম—এটাই সাধারণ চিত্র হওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম বাড়ায় সম্প্রতি চিত্রটা উল্টে যাচ্ছে। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ আবার সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ। বিষয়টি গভীরভাবে ভাবা উচিত।’