ঋণ পরিশোধ না করার সময় আর বাড়ল না

ঋণ পরিশোধের সময় না বাড়ানোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ জানায় কয়েকটি ব্যাংক।

ঋণ পরিশোধে আর কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি মাস থেকে কেউ ঋণের কিস্তি না দিলে নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণিকৃত হয়ে পড়বেন। করোনার কারণে ২০২০ সালজুড়ে কিস্তি না দিয়েও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থেকেছেন। ফলে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, এমন নিয়ম যেন অনেকে ভুলতে বসেছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে অনাদায়ি টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এ কারণে ঋণ পরিশোধ না করার সময় নতুন করে আর বাড়ানো হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বুধবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এই সিদ্ধান্ত জানায়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান ও এ কে এম সাজেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত এই সভায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখারসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পুরো এক বছর ঋণ শোধ না করেও ভালো গ্রাহক থাকা গেছে। এতে ঋণ পরিশোধে গ্রাহকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে সময় আর বাড়ছে না।
সিরাজুল ইসলাম, মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো বা না বাড়ানোর বিষয়টি ব্যাংকার্স সভার আলোচ্যসূচিতে ছিল না। তবে নতুন করে সময় না বাড়ানোয় বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ জানায় ব্যাংকগুলো। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এখন ঋণ পরিশোধে আর ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী।

গত বছরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধ না করলেও কোনো গ্রাহক খেলাপি হবেন না, এমনকি ঋণের মানের অবনমন হবে না—এই সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে খেলাপি কোনো গ্রাহক ঋণ শোধ করলে তাকে খেলাপিমুক্ত করা যাবে বলেও জানায়। পরে এই সময় বাড়িয়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুরো এক বছর ঋণ শোধ না করেও ভালো গ্রাহক থাকা গেছে। এতে ঋণ পরিশোধে গ্রাহকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে সময় আর বাড়ছে না।

এদিকে ব্যাংকার্স সভায় জানানো হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় ১ হাজার ১১০টি স্বীকৃত বিল অপরিশোধিত অবস্থায় ছিল, যার বিপরীতে ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার বকেয়া রয়েছে। আর ২১১টি বিদেশি স্বীকৃত বিল অপরিশোধিত অবস্থায় আছে, যার বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এ জন্য বিদেশি বিভিন্ন দূতাবাস বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। এতে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য সময়মতো স্বীকৃত বিল পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ নিয়ে বলা হয়, কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি খাতের ঋণ বিতরণ আশাব্যঞ্জক নয়। যেসব ব্যাংক লক্ষ্য পূরণ করেছে, তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়। আর যারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি, তাদের মার্চের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে বলা হয়েছে।