সাক্ষাৎকার

টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

সেলিম আর এফ হোসেন
প্রশ্ন:

টেকসই রেটিংয়ের তালিকায় থাকার অন্যতম শর্ত টেকসই অর্থায়ন সূচক। এই খাতের আপনাদের ব্যাংক কেমন অর্থায়ন করেছে। এসব ঋণ কোন কোন খাতে গেছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: গত বছর (২০২২ সালে) আমরা মোট অর্থায়নের ২৩ শতাংশ টেকসই অর্থায়নে বিনিয়োগ করেছি। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগের গড় ১১ শতাংশ। টেকসই অর্থায়ন ও সবুজ অর্থায়ন—দুই ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে আমরা আমাদের মোট দীর্ঘমেয়াদি ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ বিতরণ করেছি, তার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি, পরিবেশবান্ধব শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাতে আমাদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে আমরা টেকসই অর্থায়নের অন্য ক্ষেত্রগুলোর পাশাপাশি টেকসই কৃষি ও সিএমএসএমই এবং সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল অর্থায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বিতরণ করেছি। এই তহবিল দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যবহৃত হয়েছে। চলতি বছর আমরা টেকসই অর্থায়নের সব ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েছি। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে আমরা লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করেছি।

প্রশ্ন:

টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন করা ঋণের আদায় পরিস্থিতি কেমন। অন্য ঋণের মতো, নাকি ভিন্নতা আছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণের (এনপিএল) অনুপাত পুরো ব্যাংক খাতের তুলনায় অনেক কম। এসএমইতে এই হার আরও কম। টেকসই অর্থায়নেও এনপিএল অনুপাত অনেক কম। আমরা যদি কুটির শিল্প, বিশেষ করে চালকলের মতো এক বা দুটি সমস্যাজর্জরিত খাত বিবেচনায় না নিই, তাহলে দেখা যাবে টেকসই অর্থায়নের সামগ্রিক এনপিএল অনুপাত সাধারণ অর্থায়নের চেয়েও কম।

প্রশ্ন:

টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচকে ব্র্যাক ব্যাংক কেমন করছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটিতে আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে পারফর্ম করেছি। ব্যাংক খাতে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কম, তার মধ্যে আমাদের ব্যাংক অন্যতম। মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাতও ২০ শতাংশের কাছাকাছি, যা আমাদের আর্থিক বিবরণী বা ব্যালেন্স শিটের দৃঢ়তা ও শক্তিমত্তার প্রতিফলন। অন্যান্য সূচকেও ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতির তুলনায় আমরা অগ্রগামী অবস্থানে রয়েছি। আমাদের মোট ঋণ পোর্টফোলিওর অর্ধেকের বেশি আছে সিএমএসএমই খাতে। এ খাতে আমাদের গ্রাহকের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের ১৮৭টি শাখা, ৩০টি উপশাখা এবং ১ হাজার ৩৬টির বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।

প্রশ্ন:

আপনাদের ব্যাংকের সেবার পরিধি দেশজুড়ে কতটুকু ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন? মানুষ কি সহজেই আপনাদের সেবা পাচ্ছেন?

সেলিম আর এফ হোসেন: সারা বাংলাদেশেই আমাদের ব্যাংকের নেটওয়ার্ক ও সেবা রয়েছে। শাখা ও উপশাখা ছাড়াও আমাদের নেটওয়ার্কে আছে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘আস্থা’ ও করপোরেট গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘কর্পনেট’ ব্যাংকিং সেবাকে সময় ও ভৌগোলিক সীমারেখার বাইরে নিয়ে গেছে। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রতিনিয়ত লেনদেনের রেকর্ড হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকেরা যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছেন।

প্রশ্ন:

এসব উদ্যোগ কী ধরনের প্রভাব ফেলছে আপনাদের ব্যাংকিং সেবায়?

সেলিম আর এফ হোসেন: এই উদ্যোগগুলোর ফলে আমাদের মুনাফা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থিতিশীলতাও বাড়ছে। গ্রাহকদের আমরা উন্নত সেবা দিতে পারছি। পাশাপাশি গ্রাহকের ব্যবসাকে টেকসই করতে সাহায্য করছি। এর মাধ্যমে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছি। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমেও আমরা পরিবর্তন নিয়ে আসছি। সিএসআর কার্যক্রমগুলো যেন আরও গোছানো ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়, সে জন্য আমরা নতুন সিএসআর নীতি তৈরি করেছি। নারীর আত্মোন্নয়ন, প্রতিবন্ধী মানুষ ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করব আমরা। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ব্যাংকিং অন ভ্যালুজের (জিএবিভি) সদস্য হিসেবে আমরা সব সময় ব্যাংকিংয়ে মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ব্র্যাক ব্যাংক জিএবিভির পিপিপি (পিপল, প্ল্যানেট ও প্রসপারিটি) অর্থাৎ মানুষ, পৃথিবী এবং সমৃদ্ধির নীতিকে ধারণ করে। টেকসই ও দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর সেটি প্রত্যেকের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।