পর্ষদবিহীন ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা, জোর করে পদোন্নতি আদায়ের অভিযোগ
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যদিও এখন পর্যন্ত দায়িত্ব নেয়নি নতুন পর্ষদ। গত বৃহস্পতিবার আগের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ব্যাংকটিতে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। পদোন্নতি পেতে ব্যাংকের কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করছেন আগের বঞ্চিত কর্মকর্তারা। একরকম জিম্মি করে পদোন্নতি আদায় করে নিচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যে ব্যাংকটিতে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যার বড় অংশ বঞ্চিত কর্মকর্তারা। ফলে সংকটে থাকা এই ব্যাংকটিতে সংকট যেন কাটছে না।
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। আগামীকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির দায়িত্ব নেবেন তিনি। এরপরই ব্যাংকটির সার্বিক সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগে চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম।
ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরই ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকটিতে আনন্দ মিছিল করেন। এরপরই ব্যাংকটির বঞ্চিত কর্মকর্তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মানবসম্পদ বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে। নতুন পর্ষদ গঠিত হওয়ায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা তাতে সমর্থন দেন। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের কাছে যাওয়ার পর যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরাই এখন পদোন্নতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।
এ নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত পদোন্নতির দাবিতে বঞ্চিত কর্মকর্তারা আন্দোলন করেন। এর মধ্যে সহকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
পদোন্নতি পেয়েছেন ব্যাংকটির এমন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন এলাকাভিত্তিক, ব্যাচ ভিত্তিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এটাকে পদোন্নতি পাওয়া না বলে পদোন্নতি আদায় করে নেওয়া বলাই ভালো। ফলে যাদের শক্তি আছে, তারাই পদোন্নতি পাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছেন পেশাদার কর্মকর্তারা।
ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পেশাদারভাবে ব্যাংক পরিচালনা করব। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছে। এই বিশ্বাস রাখতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব; নিয়মের বাইরে ব্যাংকে আর কিছু হবে না।’
এদিকে ব্যাংকটিতে নিয়োগ পাওয়া পটিয়া এলাকার প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। সরকার পরিবর্তনের কারণে অনেকেই ব্যাংকে যাচ্ছেন না। যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরা ভয়ে ভয়ে থাকছেন। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গ্রুপ। ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের হাতে ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।