সুদ আয়ে রূপালী ব্যাংকের সুদ ব্যয় মিটছে না
এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণের সুদ আয় বেড়েছে ২০৫ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ।
আমানতের সুদ ব্যয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের সুদ আয় ২০৫ কোটি টাকা বেড়েছে। অবলোপন করা ঋণ থেকে ব্যাংকটি প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকা আদায় করেছে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে। তাতে বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে ব্যাংকটির সুদ আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গতকাল রোববার ব্যাংকটি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চ মেয়াদকালে রূপালী ব্যাংক সুদ বাবদ আয় করেছে ৮৮৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৮২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণের সুদ আয় বেড়েছে ২০৫ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ। তবে ব্যাংকটি তিন মাসে যে পরিমাণ সুদ আয় করেছে, তার চেয়ে বেশি খরচ করতে হবে আমানতের সুদ পরিশোধে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটি আমানতের সুদ পরিশোধে ব্যয় করেছে ৯২৮ কোটি টাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, সুদ আয় দিয়ে ব্যাংকটির সুদ ব্যয় মেটাতে পারছে না।
গত জানুয়ারি-মার্চে ব্যাংকটি ঋণের সুদ থেকে আয় করেছে ৮৮৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটিকে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় করতে হয় ৯২৮ কোটি টাকা।
তার বড় কারণ খেলাপি ও অবলোপন করা ঋণ। বছর বছর ঋণ বাড়লেও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকটি ওইসব ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ আয় করতে পারছিল না। তবে ব্যাংকটির বিনিয়োগ, কমিশনসহ অন্যান্য খাত থেকে ভালো আয় রয়েছে। এ আয় থেকেই আমানতের বাড়তি সুদ পরিশোধ করছে রূপালী ব্যাংক।
এদিকে রূপালী ব্যাংকের ঋণের সুদ আয় যতটা বেড়েছে, আমানতের সুদ ব্যয় বেড়েছে তার চেয়ে কম হারে। গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির ঋণের সুদ আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। আর আমানতের সুদ ব্যয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ। গত বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় ছিল ৭৩৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে ব্যাংকঋণের বেঁধে দেওয়া সুদহার তুলে নেওয়ায় ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ঋণের ৯ শতাংশ সুদ তুলে নিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে স্মার্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়। তাতে ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। যার সুফল পেয়েছে প্রায় সব ব্যাংক। কারণ, সব ব্যাংকেরই সুদ আয় বেড়েছে তাতে। যদিও ঋণের সুদের পাশাপাশি আমানতের সুদও বেড়েছে। তবে আমানতের সুদ বেড়েছে ঋণের সুদের তুলনায় কম হারে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বিভিন্ন ট্রেজারি বিল-বন্ডের বিনিয়োগ, কমিশন মাশুলসহ অন্যান্য খাত থেকে গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আয় করেছে ৪৪৫ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে এসব খাত থেকে ব্যাংকটির আয়
ছিল ৪৫৮ কোটি টাকা। এ বছর বিনিয়োগ, কমিশনসহ অন্যান্য খাতের আয় কিছুটা কমলেও ঋণের সুদ বাবদ আয় বেড়ে যাওয়ায় মুনাফাও বেড়েছে ব্যাংকটির।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়কালে রূপালী ব্যাংক কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ২৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৬ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। তাতে বেড়েছে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসও। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রূপালী ব্যাংকের সমন্বিত ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ পয়সায়। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৪ পয়সা।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে পরিচালনা ব্যয় হ্রাসও বড় ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকটির গত জানুয়ারি-মার্চে পরিচালন খরচ হয়েছে ২৪২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের যার পরিমাণ ছিল ২৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম তিন মাসে পরিচালন খরচ কমেছে ৩২ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, খেলাপি বা মন্দ ঋণের কারণে আমাদের সুদ আয় ও সুদ ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধানটি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত কয়েক বছরে এ ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। কারণ গত দুই বছরে খেলাপি ও অবলোপন করা ঋণ থেকে আমাদের আদায় বেড়েছে।