আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি
ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা কাটছে না। উপরন্তু দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করে গেছেন, তার জের টানতে হচ্ছে এখন পুরো খাতকে। পি কে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই এখন খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ কারণে সার্বিকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।
গত সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত জুন শেষে এই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফলে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরের শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
* এফএএস ফিন্যান্স খেলাপি ঋণ ৯৯.৯২% * ফারইস্ট ফিন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৮% * ৯৭ শতাংশ ঋণখেলাপি বিআইএফসি ও পিপলস লিজিংয়ের
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি হারে খেলাপি ঋণ বাড়ছে ব্যাংকে। কারণ, ব্যাংকগুলোর লুকানো খেলাপি ঋণ এখন সামনে আসছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক বছর ধরেই কঠোর তদারকির কারণে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দেখিয়ে আসছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে তদারকি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে। এ জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি বাড়ছে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো অস্থিরতা কাটেনি। কয়েকটি ব্যাংকের তারল্যসংকট প্রকট হওয়ায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও খারাপ হয়েছে। কিছু ব্যাংক যখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তখন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সরিয়ে নেন অনেক গ্রাহক। এ কারণে ওই সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ বিতরণ কমিয়ে দেয়। ফলে তাদের আমানত ও ঋণ দুই-ই কমে গেছে।
খেলাপি ঋণ কম সাত প্রতিষ্ঠানের * ১০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে এ রকম আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাতটি। এগুলো হলো আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, লঙ্কা–বাংলা ফাইন্যান্স, অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। জুনে আমানত আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকায়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে আবার আমানত কমেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, তহবিল-সংকটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সেভাবে ঋণ বাড়ছে না। গত বছরের জুন শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে আরও কমে হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পি কে হালদার-সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এফএএস ফিন্যান্সে খেলাপি ঋণ ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফিন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ৮৭২ কোটি টাকা। ৯৭ শতাংশ ঋণ খেলাপি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ও পিপলস লিজিংয়ের। এ ছাড়া ৯০ শতাংশের কম-বেশি খেলাপি ঋণ ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফার্স্ট ফিন্যান্স, আভিভা ফিন্যান্সসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
দেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইপিডিসি ফিন্যান্স, যেটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে। বর্তমানে দেশে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে।