দেশের সীমানা পেরিয়ে কার্ডে লেনদেন হোক ক্যাশলেস

francescoridolfi.com

অর্থের ব্যবহার শুরু হয়েছিল দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধা দূর করতে গিয়ে। জানা যায়, সাল ৬১৮ থেকে ৯০৭, চীনের ট্যাং ডায়নেস্টির সময়কাল। সেই সময়েই প্রথম ব্যাংক নোটের প্রচলন শুরু হয়েছিল, যা নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে, এমনকি স্বর্ণমান পার করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিল কাগুজে নোট। তবে একেক জায়গার নোটের নাম একেক। বাংলাদেশে টাকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডলার।

তাই বিদেশ যাওয়ার আগে অনেককেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধি অথবা কমে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন। নিরুপায় হয়ে মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে ডলার খোঁজায় ব্যস্ত থাকেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস তাসনিম হোসেন। তিনি বলেন বলেন, ‘লেনদেনে সক্ষম কার্ডেই করা যায় নোটবিহীন লেনদেন। বিদেশে যেতে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় দ্বৈত মুদ্রা বা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। আন্তর্জাতিক ক্যাশলেস লেনদেনের ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে যথাযথভাবে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করে, সহজেই বিদেশে গিয়ে অথবা অনলাইনে লেনদেন করা যায়। দেশের ভেতরে এবং বাইরে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সঙ্গে থাকা মানে স্বাচ্ছন্দ্য লেনদেন আর সহজ জীবন।

দ্বৈত মুদ্রা কার্ড

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড এমন এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড, যা দিয়ে আপনি চাইলে একই সঙ্গে দুইটি আলাদা আলাদা মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন। কার্ডধারী যখন বাংলাদেশি টাকায় লেনদেন করেন, তখন তা স্থানীয় মুদ্রায় সম্পন্ন হয়, যাকে বলে লোকাল পার্ট। আর যখন ভিন্ন কোনো মুদ্রায় লেনদেন করেন, তখন সেটি ইউএস ডলারে সম্পন্ন হয়, যাকে বলে লোকাল ফরেন পার্ট। সাধারণত ক্রেডিট কার্ডে এ ধরনের সেবা দেখা গেলেও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডেবিট কার্ডেও এ সুবিধা চালু করেছে।

যে যে সুবিধা থাকছে ডুয়েল কারেন্সিতে

ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনের সুবিধার্থে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দরকার। যেমন বিদেশ থেকে কোনো পণ্য কেনা, বাইরে ঘুরতে গেলে খরচ করা, ডিজিটাল মার্কেটিং বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু বুস্ট করা, ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্টে, বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সাইট থেকেও কেনাকাটাসহ ইত্যাদি কাজে লাগে এই কার্ড।

যেভাবে মিলবে এ কার্ড

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পেতে হলে আপনার কিছু জিনিস থাকা প্রয়োজন। সেগুলো হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের অনুমোদন পেতে একটি বৈধ পাসপোর্ট। এছাড়াও ব্যাংকের ভিন্নতার সঙ্গে অন্য আরও কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হতে পারে।

ভিসা এবং মাস্টার কার্ড

ভিসা কার্ড হলো ভিসা কর্তৃক ব্র্যান্ডেড ও ভিসা নেটওয়ার্ক দ্বারা চালিত পেমেন্ট কার্ড। বিশ্বের ২০০ দেশে এ কার্ড সেবা দিচ্ছে। পেমেন্ট নেটওয়ার্ক হিসেবে ভিসার পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মাস্টারকার্ড। মাস্টার কার্ড ব্র্যান্ডেড পেমেন্ট কার্ডগুলি সরবরাহের ক্ষেত্রে মাস্টার কার্ড তাদের অংশীদার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এক জোট হয়ে কাজ করে। কার্ড পেমেন্ট নেওয়া বিশ্বের প্রায় যেকোনো অনলাইন বা ফিজিক্যাল মার্কেটে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করা যায়। অনলাইন নিরাপত্তায় মাস্টার কার্ড ‘সিকিউরড কোড স্কিম’, অন্যদিকে ভিসা কার্ড ‘ভেরিফাইড বাই ভিসা স্কিম’ নামের একধরনের সুরক্ষা সিস্টেম ব্যবহার করে। এতে লেনদেন হয় নিরাপদ।

মূলত মাস্টার ও ভিসা কার্ডে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। একটু বিস্তারিত জানা যাক।
সুবিধাসমূহ

এর সঙ্গে যুক্ত করেন ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস তাসনিম হোসেন। তাঁর মতে, মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ডসহ অন্যান্য যে কোনো কার্ডের মাধ্যমে নিরাপদে লেনদেন করার জন্য গ্রাহককে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গ্রাহক যাতে কখনোই সম্পূর্ণ কার্ড নম্বর, পিন, ওটিপি, সিভিভি অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার না করেন। এমনকি তথ্যগুলো ব্যাংকের কন্টাক্ট সেন্টার অথবা অনুরূপ কোনো নম্বর থেকেও জানতে চাওয়া হলে জানানো উচিত নয়।

মূলত মাস্টার ও ভিসা কার্ডে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। একটু বিস্তারিত জানা যাক।
সুবিধাসমূহ

বেসিক, মিড-রেঞ্জ এবং প্রিমিয়াম—এ তিন ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে ভিসা ও মাস্টার কার্ড।

বেসিক: জরুরি সহায়তা, জরুরি কার্ড রিপ্লেসমেন্ট, বর্ধিত ক্রয় ওয়ারেন্টি, ভাড়া গাড়ি সংঘর্ষ সুরক্ষা এবং বিমানে টিকিটেও বিভিন্ন ছাড় দিয়ে থাকে।

মিড-রেঞ্জ: ভিসা কার্ডের মিড-রেঞ্জ প্যাকেজের নাম সিগনেচার। বেসিক প্যাকেজের পাশাপাশি যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, তা হচ্ছে—অনলাইন পোর্টালে ডিসকাউন্ট, বিনোদন, ডাইনিং, ভ্রমণ এবং ক্রীড়া ইভেন্টে ডিল, ২৪/৭ আঞ্চলিক সেবা। অপর দিকে মাস্টার কার্ডের মিড-রেঞ্জ প্যাকেজের নাম ওয়ার্ল্ড। মাস্টার কার্ডের ওয়ার্ল্ড প্যাকেজের সুবিধাসমূহ হলো—১২০ দিনের মূল্য সুরক্ষা, নির্ধারিত ব্যক্তিগত ভ্রমণ পরামর্শদাতা, নির্দিষ্ট হোটেলে রুম আপগ্রেড, দেরিতে চেক আউট ইত্যাদি।

প্রিমিয়াম: বেসিক ও সিগনেচার প্যাকেজসহ আরও বাড়তি সুবিধা নিয়ে ভিসা কার্ডের প্রিমিয়াম প্যাকেজের নাম ‘ভিসা ইনফিনিট প্যাকেজ’। এটি মূলত উচ্চবিত্তদের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম সুবিধা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে মাস্টার কার্ডের ‘ওয়ার্ল্ড এলিট প্যাকেজ’ বেসিক ও ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি দেয় বাড়তি সুবিধা। সেগুলো হচ্ছে—গাড়িভাড়াতে ছাড়, কম বিমানভাড়া, বিমানবন্দর লাউঞ্জগুলোতে প্রবেশ, যেকোনো ব্যয় সুরক্ষা ইত্যাদি।

পাশাপাশি ভিসা বা মাস্টার কার্ড যদি হয় ডুয়েল কারেন্সি লেনদেনে সক্ষম, তাহলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই মিলবে এমন সুবিধা। ভিসা বা মাস্টার কার্ড পেতে চাইলে, অ্যাকাউন্ট আছে এমন যেকোনো ব্যাংকে ভিসা কার্ড বা মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে। সর্বোপরি বলাই যায়, মানুষ আসলে টাকা চায় না, চায় সেবা। খুশিমতো কেনাকাটা। যা কাগুজে নোট ছাড়া অনায়াসেই ব্যাংক কার্ডেই পাওয়া সম্ভব। তাই ধীরে ধীরে আগামীর বিশ্বে ক্যাশের চাইতে কার্ডের প্রচলন যে বেশি হবে, তা সহজেই অনুমেয়।