বিএফআইইউর নতুন প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম

এ এফ এম শাহীনুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) শীর্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএফআইইউর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। এরপর নিয়মিত অবসরে যান তিনি। ওই সময়ে বিএফআইইউর প্রধান পদে থাকা মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কর্মকর্তাদের চাপে মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন।

বিএফআইইউর নতুন প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রোববার থেকে কাজে যোগদান করব। সরকার যে উদ্দেশ্যে বিএফআইইউ প্রতিষ্ঠা করেছে, আমি তার স্বার্থ রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

সরকারের এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) এর ধারা ২৪ (১) (ঘ) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯–এর বিধি ২২ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম শাহীনুল ইসলামকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের পদমর্যাদায় সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর যোগদানের তারিখ থেকে ২ বছর মেয়াদে বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলো।

দুর্নীতিসহ অনিয়ম ও অপরাধের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কিংবা ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা অনেক প্রভাবশালী। কেউ কেউ বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। গণমাধ্যমে এসব খবর নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হলেও দেশের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ তাঁদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভাগটি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

এখন প্রায় প্রতিদিনই এ বিভাগ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে, আটকে দিচ্ছে ব্যাংকে থাকা লকার। তলব করছে ব্যাংক লেনদেনের তথ্য। এসব হিসাবে হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত থাকার তথ্য মিলছে। এই হিসাবগুলো যাঁদের নামে, তাঁদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তারাও আছেন। তাঁদের ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থের উৎস ও আয়ের নথি খতিয়ে দেখছে বিএফআইইউ। সেই সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার (ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।

দেশ ও বিদেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেও তা প্রতিরোধে গত ১৫ বছরে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিএফআইইউ। এ অভিযোগে সরকার পতনের পর বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করে পদত্যাগে বাধ্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তখন তাঁর কক্ষ ও ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অর্থ পাচারসংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও।