ন্যাশনাল ব্যাংকের পদত্যাগ করা এমডি কাজে ফিরবেন: বাংলাদেশ ব্যাংক
বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেনকে কাজে ফিরতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডাক পেয়ে আজ রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যান মেহমুদ হোসেন। এ সময়ই গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তাঁকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ প্রথমে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেও এখন তা পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে পর্ষদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির পদত্যাগপত্র পর্ষদ গ্রহণ করেনি। পর্ষদের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে রয়েছে। ফলে এখন উনি নিয়মমতো ব্যাংকে যোগদান করবেন।’
এমডি মেহমুদ হোসেন ১৮ জানুয়ারি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। একই দিন তিনি সাত দিনের ছুটির জন্য আবেদন করেন। এরপর আর ব্যাংকে যাননি তিনি। এমডি পদে তাঁর মেয়াদ আছে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ব্যাংক খাতের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, পদত্যাগপত্রে তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করলেও তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাঁকে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউসে ডেকে নেওয়া হয়। এরপরই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। মেহমুদ হোসেন পদত্যাগ করায় ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সৈয়দ রইস উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল।
ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে মেহমুদ হোসেন এনআরবি ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ার এমডি ছিলেন। এর আগে ছয় বছরে চারজন এমডিকে মেয়াদ শেষের আগেই ব্যাংকটি থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
মেহমুদ হোসেনের পদত্যাগের ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যিক ব্যাংকটির পরিচালক রন হক সিকদার, গ্রুপটির একজন কর্মকর্তা ও ব্যাংকের ডিএমডি সৈয়দ রইস উদ্দিন। বাংলাদেশ ব্যাংকে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতেই পদত্যাগ করা এমডিকে ব্যাংকে ফেরানোর ইঙ্গিত দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে যান মেহমুদ হোসেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকে নানা অনিয়ম ও এমডির পদত্যাগের ঘটনা নতুন নয়। গত দেড় দশকে ব্যাংকটির বেশির ভাগ এমডিই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। যে কারণে ২০১৪ সালে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ব্যাংকটির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ব্যাংকটির মালিকানায় রয়েছে সিকদার গ্রুপ। তারাই ব্যাংকটির নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
এমন এক পটভূমিতে পদত্যাগ করা এমডিকে ন্যাশনাল ব্যাংকে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তিনি আদৌ কাজে যোগ দেবেন কি না বা দিলে কবে যোগ দেবেন, এ নিয়ে ব্যাংকটিতে ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ, ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, ব্যাংকের পর্ষদের বিরুদ্ধে গিয়ে টিকে থাকা বেশ কঠিন।