উৎসবসহ বছরজুড়ে ব্যাংক কার্ডে যত ছাড়
বছরে দুই ঈদসহ নানা উৎসবে বেড়ে যায় কেনাকাটার ব্যস্ততা। বেশ কয়েক বছর ধরেই ঈদসহ উৎসবকেন্দ্রিক কেনাকাটায় ক্রেতারা ক্যাশলেস লেনদেনেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তাই গ্রাহকদের কেনাকাটাকে আরও সহজ ও নিরাপদ করতে ব্যাংকগুলোও দিচ্ছে কার্ডনির্ভর লেনদেনে নানা অফার বা সুবিধা। ফলে নগদ টাকা ব্যবহারের ঝক্কি দূর হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহকেরাও পাচ্ছেন সাশ্রয়ে কেনাকাটার সুযোগ।
এ প্রসঙ্গে মিডল্যান্ড ব্যাংকের হেড অব কার্ডস মো. আবেদ-উর রহমান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের জন্য কার্ডে কেনাকাটায় নানান ছাড় দিয়েছি। প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের কাছে খুদেবার্তা ও ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অফারের তথ্য জানানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন দোকানের ক্যাশ কাউন্টারেও ঝুলছে এ-সংক্রান্ত প্রচারণা। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গ্রাহকও যুক্ত হচ্ছেন আমাদের সঙ্গে।’
মো. আবেদ-উর রহমান আরও জানান, এবারের ঈদ উপলক্ষে মিডল্যান্ড ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য সুবিধার কথা। ব্যাংকটির কার্ডের মাধ্যমে কোরবানির পশু ক্রয়ে ক্রেতারা পাবেন সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ মূল্যছাড়, সঙ্গে ফ্রি হোম ডেলিভারি। এ ছাড়া কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই নতুন রেফ্রিজারেটর কেনার পরিকল্পনা করেন। তাই দেশের শীর্ষস্থানীয় রেফ্রিজারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার, ওয়ালটন, ট্রান্সকম, সনি, স্কয়ারসহ মিডল্যান্ড ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ইএমআই পার্টনার থেকে পণ্য ক্রয়ে মিলবে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা সমমূল্যের ২০ হাজার রিওয়ার্ড পয়েন্ট; যা ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করে গ্রাহকেরা প্রাপ্ত পয়েন্টকে টাকার মানে নিজের অ্যাকাউন্টে ক্যাশ হিসেবে যোগ করে নিতে পারবেন।
ঈদে ঘরমুখী মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত নগদ টাকা নিয়ে চলাফেরা করতে চান না। তাই মিডল্যান্ড ব্যাংকের ‘মিডল্যান্ড অনলাইন’ অ্যাপের মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রকেট, বিকাশ, নগদ এবং উপায়-এর মাধ্যমে সরাসরি অ্যাড মানি করার সুযোগ থাকবে। তবে কার্ডের বিল পরিশোধ করতে গ্রাহকেরা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শাখা ছাড়াও তালিকাভুক্ত ৩৯টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় গিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন। ব্যাংকটির গোল্ড ও প্লাটিনাম গ্রাহকদের জন্য রয়েছে সমান সুবিধা।
কার্ডের সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধার গুরুত্ব নিয়ে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস মো. আবেদ-উর রহমান বলেন, ‘আগামীর ক্যাশলেস বাংলাদেশ তৈরিতে আমাদের ব্যাংকের কার্ড সেবায় ডিজিটাল লেনদেনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব বাড়ছে। গ্রাহকেরা কার্ডে লেনদেন করার মাধ্যমে ব্যাংক এবং লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান—উভয়ের সুযোগ-সুবিধা একসঙ্গে পাচ্ছে।’
অন্যদিকে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড ঈদসহ সারা বছরই কার্ডনির্ভর লেনদেনে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে মেঘনা ব্যাংকের হেড অব কার্ডস জিশান আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের জন্য এমনিতেই বছরজুড়ে বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকি। তবে ঈদ উপলক্ষে থাকে আকর্ষণীয় এবং একটু বেশি কিছু।’
জিশান আহাম্মদ জানান, সব সময়ের জন্য মেঘনা ব্যাংকের কার্ডে রয়েছে বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক ছাড় সুবিধা। সঙ্গে রয়েছে কোনো রকম চার্জ ছাড়াই দুটি সাপ্লিমেন্টারি কার্ড। এ ছাড়া প্রথম বছরের জন্য শর্তযুক্ত ৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার, দেশের সব পাঁচতারকা মানের হোটেল থেকে একটি কিনলে একটি সৌজন্যমূলক বুফে এবং ৬০টির বেশি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় একই সুবিধা রয়েছে। মেঘনা ব্যাংকের কার্ডে বছরের বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য ক্যাম্পেইনগুলো হচ্ছে আড়ংয়ের সঙ্গে ৩০ শতাংশ, স্টার সিনেপ্লেক্সে ৫০ শতাংশ, স্টার কাবাবে ২৫ শতাংশ, ফুডপান্ডায় ৩০ শতাংশ এবং বুকস্টোরে ২৫ শতাংশ ক্যাশব্যাক। এ ছাড়া মেঘনা ব্যাংকের ডেবিট কার্ড গ্রাহকেরা তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করতে পারেন দেশের যেকোনো এটিএম থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি বা বাড়তি কোনো চার্জ ছাড়াই। আর বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মেঘনা ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহকেরা।
শুধু সুযোগ-সুবিধা নয়, কার্ডের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন গ্রাহকেরা। এ প্রসঙ্গে জিশান আহাম্মদ বলেন, ‘কার্ডনির্ভর লেনদেন নিরাপদ করতে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকেরা যেকোনো নিরাপত্তার কারণে তাঁদের কার্ড ব্লক করতে পারেন, লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারেন, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) চ্যানেলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো ব্যাংকে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স ছাড়া বাকি সব সেবা ঘরে বসে অনলাইনেই মেঘনা ব্যাংকের “ডিজিটাল সার্ভিস ডেস্ক” সেবার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ফ্রিতে নিতে পারবেন গ্রাহকেরা। যা কার্ডনির্ভর লেনদেনকে ত্বরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যাশলেস আগামীর বাংলাদেশ তৈরি করতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর এসব আকর্ষণীয় সুবিধা ও ছাড় গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহী করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।