ইসলামী ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধি পরিবর্তন করছে মালিকপক্ষ
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধি পরিবর্তন শুরু করেছে ব্যাংকটির বর্তমান মালিকপক্ষ এস আলম গ্রুপ। এ জন্য তারা কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করছে, আবার তাদেরই কিছু প্রতিষ্ঠান সেই শেয়ার কিনে নিচ্ছে।
শেয়ারবাজারে ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে এসব বড় অঙ্কের শেয়ারের হাতবদল হচ্ছে। শেয়ারের বড় ধরনের এ হাতবদল শুরু হয়েছে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।
২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। এরপর আরমাডা স্পিনিং মিলের প্রতিনিধিকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হলেও এবার জেএমসি বিল্ডার্সের পক্ষে চেয়ারম্যান করা হয়েছে আহসানুল আলমকে। তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বড় ছেলে ও ইনফিনিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ইসলামী ব্যাংক শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষকে শেয়ার ধারণসংক্রান্ত সর্বশেষ যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, গত জুন মাসে ব্যাংকটির সব শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে আরমাডা স্পিনিং মিলস। পাশাপাশি কিংসওয়ে এনডেভার্স ও ইউনিগ্লোবস বিজনেস রিসোর্সেসও তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধিদের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
কিংসওয়ে এনডেভার্সের পক্ষে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মো. সেলিম উদ্দিন, তাঁকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা করেছে। আর ইউনিগ্লোবস বিজনেস রিসোর্সেসের পক্ষে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন আবদুল মতিন। তিনি পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব কোম্পানি ব্যাংকটির মালিকানায় থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের।
যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী পরিচালক আবদুল মতিন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি গত ৮ জুন পদত্যাগ করেছি। যত দিন দায়িত্বে ছিলাম, চেষ্টা করেছি মানুষের আমানতের নিরাপত্তা দেওয়ার।’
ইসলামী ব্যাংক গতকাল সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, উল্লেখিত তিনটি কোম্পানির পক্ষ থেকে ব্যাংকটির পরিচালক পদে থাকা প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ারের পরিমাণও কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশে। গত মে মাসেও উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ছিল প্রায় ৫১ শতাংশ শেয়ার।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসার পর আরমাডা স্পিনিং মিলসের পক্ষ থেকে নিযুক্ত প্রতিনিধি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সর্বশেষ আরমাডার প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।
এদিকে গত কয়েক দিনেও শেয়ারবাজারে ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ারের হাতবদল হয়েছে। ব্যাংকটির মালিকানায় থাকা এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসব শেয়ারের হাতবদল হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আরও জানিয়েছেন, শিগগির নতুন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কমপক্ষে দুজন পরিচালক নিয়োগ করা হবে ব্যাংকটিতে। গত বুধ ও রোববার—এই দুই দিনে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের ১৪৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। তবে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় মূল বাজারে ব্যাংকটির শেয়ারের খুব বেশি লেনদেন হচ্ছে না।