একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত ন্যাশনাল ব্যাংকেরও
কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। এর পরিবর্তে খেলাপি ঋণ ও সাধারণ ঋণ আদায় জোরদারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে চায় ব্যাংকটি। গত শনিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরীকে ডেকে সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের এই পরামর্শ দেন। জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংককে এ–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কোনো ব্যাংক আমাদের একীভূত হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও কোনো ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একীভূত হতে বলেনি। ফলে কারও সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। একীভূত হতে হলে দুই পক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন। না হলে সেটা অধিগ্রহণ হয়ে যায়। আমাদের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে দেখি ব্যাংকটিকে ভালো করা যায় কি নান্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার
এর ধারাবাহিকতায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছে, তাই এখনই একীভূত হওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো করার চেষ্টা করা হবে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই খেলাপি ঋণ ও নিয়মিত ঋণ আদায় জোরদার করে পরিস্থিতির উন্নতি করতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ গ্রাহকদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ চলতি মাসে ৭ কোটি টাকা, নাসা গ্রুপ ৩৩ কোটি টাকা ও বেক্সিমকো গ্রুপ ২০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকটির ঋণ আদায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। পাশাপাশি যেসব ঋণ আদায় হচ্ছে না, তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করছে ব্যাংকটি। এর ফলে অনেক গ্রাহক ব্যাংকটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। যাঁরা আগে ব্যাংকের ডাকে সাড়া দেননি, তাঁরা এখন ব্যাংকে ফিরেছেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো ব্যাংক আমাদের একীভূত হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও কোনো ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একীভূত হতে বলেনি। ফলে কারও সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। একীভূত হতে হলে দুই পক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন। না হলে সেটা অধিগ্রহণ হয়ে যায়। আমাদের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে দেখি ব্যাংকটিকে ভালো করা যায় কি না।’
ব্যাংক খাত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংককে ডেকে সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে এক্সিম ব্যাংক দুর্বল হিসেবে পরিচিত পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ্রহ দেখালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে রাজি হয়। এরপর ১৪ মার্চ ইসলামি ধারার এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আলাদা বৈঠক করে একে অপরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। পরে গভর্নরের উপস্থিতিতে দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এরপর ৩ এপ্রিল সরকারি খাতের দুটি ব্যাংককে অন্য দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এবং সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে মিলবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। এরপর ৮ এপ্রিল বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি খাতের সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্রগুলো জানায়, সর্বশেষ ৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত আসে। সব মিলিয়ে পাঁচটি আলাদা বৈঠকে ব্যাংক একীভূত করার এসব সিদ্ধান্ত হয় এবং সব কটি বৈঠকই হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এসব বৈঠকে বেসিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া সব কটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বেসিক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব জানতেন না যে তাঁদের ব্যাংক একীভূত হতে চলেছে।
তবে ইতিমধ্যে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করার জন্য সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে বেসিক ব্যাংক। রাকাবকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা ও বিভিন্ন সংগঠন। এখন ন্যাশনাল ব্যাংকও একীভূত হওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিল।
ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানায় থাকা সিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধেই এত দিন অনিয়মের নানা অভিযোগ ছিল। শেষ পর্যন্ত সিকদার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর গত ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গঠন করে নতুন পর্ষদ, যারা এখন ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।