বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন শিথিল

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের দুটি ধারা শিথিল করার অনুমতি দিয়েছে।

গ্রুপটি এরই মধ্যে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া একক ঋণগ্রহীতার সীমাও অতিক্রম করেছে। ফলে নতুন করে তাদের আর ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইনের দুটি ধারা থেকে জনতা ব্যাংককে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে এই অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে বেক্সিমকোকে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকটি।

এদিকে তারল্যসংকট ও আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংক রেটে (সুদে) ৫ বছরের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ধার চেয়েছে জনতা ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটি সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার মূলধনের জোগান চেয়েছে।

জানা গেছে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আওতাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রথম সভা গত ২৮ নভেম্বর শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ইউনিটগুলোতে নিযুক্ত শ্রমিকদের আগামী তিন মাসের বেতন পরিশোধে প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা দেবে জনতা ব্যাংক।

তবে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ায় এবং একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করায় বেক্সিমকোকে আর ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই জনতা ব্যাংকের। পাশাপাশি ব্যাংকটি তারল্যসংকটে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জনতা ব্যাংক চিঠি দিয়ে আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি ও ঋণ বিতরণের অনুমতি চেয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে বর্তমানে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, যা খেলাপি হয়ে পড়েছে।

চিঠিতে জনতা ব্যাংকের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয় ব্যাংকের ৬০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বা ৬১ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে ১৮ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করতে হচ্ছে। তহবিল সংকট কাটাতে ও আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখতে ব্যাংক রেটে (সুদে) ৫ বছরের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ হাজার কোটি টাকা মূলধনও চেয়েছে ব্যাংকটি।

এমন পরিস্থিতিতে বেক্সিমকো গ্রুপকে ঋণ দিতে জনতা ব্যাংকের জন্য ব্যাংক আইনের দুটি ধারা শিথিলের অনুমতি প্রদান করা হয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়। প্রতি মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। ফলে তিন মাসের বেতন দিতে ১৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন হলেও জনতা ব্যাংক একসময় দেশের একটি ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্যাংকটির অর্থায়নে দেশের অনেক শিল্পপতি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন। সেই ব্যাংকের দেওয়া ঋণ এখন সবচেয়ে বেশি খেলাপি। গত ১৫ বছরে বড় ধরনের ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ব্যাংকটিতে। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন ব্যাংকটির কিছু কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সময়ে পর্ষদে থাকা পরিচালকেরা।

জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটিতে আমানত ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। চলতি ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হবে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তাতে বছর শেষে লোকসান বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।