এ বছর বিনিয়োগ বেড়ে দ্বিগুণ হবে

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরী।

প্রথম আলো:

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসা এখন কেমন চলছে?

ফরমান আর চৌধুরী: তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে আমাদের ব্যাংকের এজেন্টরা বেশ ভালো করছে। এর পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে। সেগুলো হলো শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ব্যাংকের সব আউটলেট চালু আছে। কোনো আউটলেট বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া আমাদের আউটলেটে কোনো ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি। এ জন্য স্থানীয়ভাবে এসব আউটলেটের প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দুটোই বেড়েছে। আমাদের এজেন্টরা এরই মধ্যে একেকজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেছেন। আর আউটলেটগুলো পরিচালিত হচ্ছে ছোট শাখার আদলে। অনেক ক্ষেত্রে এসব আউটলেটে গ্রামীণ শাখার চেয়েও বেশি লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ৫১৫ জন এজেন্ট ও ৭৩৭টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। আমাদের পর্যালোচনায় দেখেছি, যেসব এজেন্ট পরিশ্রম করেন, স্থানীয়ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আন্তরিকভাবে সেবা দিচ্ছেন, তাঁরা সবাই লাভে ব্যবসা করছেন।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দেখা যাচ্ছে, আমানতের চেয়ে বিনিয়োগ কম। কেন সেটি হচ্ছে, বিনিয়োগ বাড়াতে আপনারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন।

ফরমান আর চৌধুরী: এজেন্ট আউটলেটে বিনিয়োগের বিষয়ে সবারই স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। এখানে বলে রাখা ভালো, এজেন্টরা সরাসরি কোনো বিনিয়োগ বা ঋণ দিতে পারে না। বিনিয়োগ বা ঋণ দিতে হয় এজেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত শাখার মাধ্যমে। আবার এজেন্টরা সাধারণত সংযুক্ত শাখা থেকে কিছুটা দূরবর্তী এলাকায় থাকে। তাই সংযুক্ত শাখা থেকে বিনিয়োগ তদারকিতে কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকে। এ কারণে আমানতের চেয়ে বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। তবে আমরা সংযুক্ত শাখার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে বিনিয়োগ প্রদান করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আওতায় খাদ্যনিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমাদের ব্যাংকের জন্য যে বরাদ্দ, তার সিংহভাগই আমরা এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে বিতরণ করছি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে আমরা ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ বা ঋণ প্রদান করেছি। চলতি বছর তা বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

যেভাবে প্রযুক্তির প্রচার ঘটছে, তাতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

ফরমান আর চৌধুরী: এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। এ সেবার আওতায় হিসাব খোলা থেকে শুরু করে হিসাবের তথ্য সরবরাহ—সবকিছুতেই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার দ্রুত প্রসার ঘটছে। এজেন্ট আউটলেটের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতাধীন। লেনদেনের তথ্য যাচাইয়ের জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি আইরিশ ও ফেইস ডিটেকশন প্রযুক্তি নিয়েও আমরা কাজ করছি। এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাবে। এ ছাড়া হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ই-কেওয়াইসির দিকে অগ্রসর হচ্ছি আমরা। অর্থ পাচার প্রতিরোধে বিশেষ সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। আমাদের কোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নেক্সট জেনারেশন সুবিধা চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে এজেন্ট ব্যাংকিংসহ সব ক্ষেত্রে নতুনত্বের ছোঁয়া লাগবে। তাই প্রযুক্তির যত বেশি বিকাশ হবে, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার প্রতি মানুষের আস্থা তত বাড়বে।

  • ফরমান আর চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক