আমানতকারীরা টাকা তুলে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সহায়তা নেয় কিছু ব্যাংক
শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার করতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ‘গত বছরের শেষ সময়ে ব্যাংক থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেন। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা করতে গেলে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো থাকতে হয়। টাকা ধারের ফলে সেটা করা (ভালো প্রতিবেদন তৈরি করা) সম্ভব হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, ফার্স্ট সিকিউরিটিসহ পাঁচ ব্যাংককে কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তা নিতে হলো। ব্যাংক খাতের হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে আজ সোমবার ঢাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, তিন ভাইস চেয়ারম্যান—সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ও কোষাধ্যক্ষ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি মো. আহসান-উজ জামান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, জনগণকে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তারল্য সহায়তা দিয়েছে। কারণ, প্রায় দুই কোটি মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখেছেন।
গত বছরে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য কোনো ধরনের বিল বা বন্ড জমা দিতে হয়নি। মূলত শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সহায়তা দেয়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদের চাপ আছে কি না এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পেশাদারত্বের সঙ্গে চলছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন,‘কোনো ব্যাংকের এমডি কি বলবে, পরিচালনা পর্ষদ চাপ প্রয়োগ করে?’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ব্যাংক খাতে খারাপ ঘটনার চেয়ে ভালো উদ্যোগ বেশি।’
এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন জানান, ব্যাংক খাতের হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরতে এখন থেকে প্রতি তিন মাস পরপর সংবাদ সম্মেলন করা হবে। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের যে সমস্যা আছে, তা অস্বীকার করছি না। ভালো খবরও আছে। ডলার–সংকট প্রায় কেটে গেছে। ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। কেউ কোনো ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ফেরত যায়নি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির ফলে বাণিজ্যনির্ভর অর্থ পাচার কমে গেছে। ব্যাংকগুলোও এখন সতর্ক হয়ে গেছে।
এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ আসবে। এই অর্থ এলেই আর্থিক হিসাবের উন্নতি ঘটবে।
মাসরুর আরেফিন বলেন, ব্যাংকগুলোর ডলার পরিস্থিতি গত বছরে ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলার ঋণাত্মক হয়ে পড়েছিল, যা এখন ইতিবাচক ধারায়। ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার মজুত রয়েছে। ফলে ডলার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম এখন কম।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, ব্যাংক খাতের আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার একটি ব্যাংকের এমডি ও এবিবির সদস্য ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ থাকলেও এবিবি কখনো তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমান কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, এবিবি পদক্ষেপ নেবে কি না। এই প্রশ্নের জবাবে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। এবিবি একটি ফোরাম মাত্র। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এই ফোরামের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’
প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার সংশ্লিষ্ট ছিলেন, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরানোর অভিযোগ রয়েছে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখেছিলেন, এমন অনেকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। পি কে হালদার বর্তমানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আটক রয়েছেন।