সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আর আসবেন না মতিউর রহমান: ব্যাংক চেয়ারম্যান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরিয়ে দেওয়া আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর রহমান রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকেরও পরিচালক। তবে আজ রোববার সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে মতিউর রহমান উপস্থিত হননি। তিনি আর কোনো সভায় উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী।
আজ পর্ষদ সভা শেষে জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো পরিচালক নিয়োগ, স্থগিত বা বাতিল করার এখতিয়ার সরকারের। সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা এসেছে, উনি (মতিউর রহমান) আর আমাদের বোর্ডে উপস্থিত হবেন না, সভায় আসবেন না। আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত ব্যাংকের সব পরিচালককে জানিয়ে দিয়েছি।’
তবে এখন পর্যন্ত মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
এর আগে আজই অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে তাঁর বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে কেন এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন এবং মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
মতিউর রহমান ছিলেন এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
সূত্রগুলো জানায়, শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ যেহেতু মতিউর রহমানকে আগে থেকেই ভালো করে চিনতেন, তাই তিনি তাঁকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তৎকালীন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের তদবির তিনি আর ফেলতে পারেননি।
এ অভিযোগের সত্যতা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে গতকাল শনিবার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয়। বার্তাটি তিনি দেখলেও জবাব দেননি; এমনকি শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহও কথা বলতে চাননি।
একটি সূত্র জানায়, মতিউর রহমানের সঙ্গে আব্দুর রউফ তালুকদারের পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বেসরকারি একটি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাঁরা এক দশকের বেশি সময় ধরে এই শিল্পগোষ্ঠীকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর ও ব্যাংক বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। তাঁদের পরিবার একসঙ্গে বিদেশ সফরও করেছে বলে জানা গেছে।