কী চিন্তা থেকে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন।
তানভীর আহমেদ: পাঁচ বছর আগে যখন আমরা যাত্রা শুরু করি, তখন দেশের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বেশির ভাগ মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা। তখন মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মধ্যে ছিল। অর্থনীতির ৫২ শতাংশ চলত কাগুজে টাকার ওপর। তখন ৬০টি ব্যাংক ছিল, এমএফএস ছিল ১৭টির মতো—কেউই এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেনি। তখন স্থানীয়ভাবে টাকা আদান-প্রদানের পাশাপাশি এমএফএস দিয়ে শুধু মোবাইল রিচার্জ করা যেত। আমরা পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নগদের কার্যক্রম শুরু করি। তখন একটা হিসাব খুলতে সাত দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেত। আমরাই প্রথম ই-কেওয়াইসির (অনলাইনে গ্রাহকের তথ্য সংযুক্তি) মাধ্যমে তাৎক্ষণিক হিসাব খোলা শুরু করি, যা সহজেই গ্রাহকের কাছে নগদকে পৌঁছে দেয়। এখন সব ব্যাংক ও এমএফএস ই-কেওয়াইসি ব্যবহার করছে। আমরাই এই সেবার জনক।
নগদে কখনো ডাক বিভাগের মালিকানা ছিল না। ডাক বিভাগের ব্র্যান্ড ব্যবহার করছে নগদ। এ জন্য ডাক বিভাগের সঙ্গে ৫১ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগি করে নগদ।তানভীর আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, নগদ
তাৎক্ষণিক হিসাব খোলার সুযোগের কারণেই কি মানুষ দ্রুত নগদকে বেছে নিয়েছে।
তানভীর আহমেদ: অবশ্যই। অনেক কারণের মধ্যে এটাও অন্যতম একটি কারণ ছিল। আজকের নগদের এই অবস্থানে আসার পেছনে রয়েছে ক্লিক করে নগদের হিসাব খোলার সুবিধা। আমরা মানুষের জীবন সহজ করার পাশাপাশি টাকা উত্তোলন খরচ অর্ধেক করেছি, অন্যকে বিনা খরচে টাকা পাঠানোর সুবিধা দিয়েছি। ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রসারে যেসব বাধা ছিল, তা দূর করেছি। ফলে মানুষ দ্রুত এই সেবায় এসেছে এবং নগদকে গ্রহণ করেছে। নগদ এখন দেশের প্রতিটি পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে।
নগদের পাঁচ বছরে চোখে পড়ার মতো কি পরিবর্তন হয়েছে?
তানভীর আহমেদ: গত পাঁচ বছরে নগদের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ৯ কোটি ১৩ লাখ গ্রাহক নগদে হিসাব খুলছেন। দিনে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে নগদ এখন এমনভাবে যুক্ত হয়েছে যে আমরা কোনো ঘোষণা দিলেই ২৪ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয় না। আমরা যখন শুরু করি, তখন এমএফএস ব্যবসার ৯৮ শতাংশই ছিল একটি প্রতিষ্ঠানের। এখন এই ব্যবসার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নগদের। শুধু টাকা পাঠানো নয়, সব ধরনের লেনদেন হচ্ছে নগদে। করোনার সময় যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল, নগদ না থাকলে আরও বড় সমস্যা দেখা দিত।
এমএফএস থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিল নগদ। এখন আবার ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে, কেন?
তানভীর আহমেদ: এমএফএস খাতে সেবা দেওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। শুধু এ সেবা দিয়ে মানুষের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। আরও বেশি সেবা দিতে আমরা তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়েছিলাম। তখন দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা ছিল না। নীতিমালা হওয়ার পর আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ফেরত দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েছি। আমরা মনে করি, ২৪ ঘণ্টার আর্থিক সেবার চাহিদা পূরণ সম্ভব ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংক কবে চালু হচ্ছে। বাড়তি কী সেবা দেবেন আপনারা?
তানভীর আহমেদ: এখনকার এমএফএস অ্যাপে যা আছে, তা খুবই সীমিত সেবা। মুদিদোকানের যে মালিক, তার হয়তো ঋণ ও লেনদেন বাড়ানো প্রয়োজন। এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির ৫০ শতাংশ। তাদের আর্থিক সেবা দেবে ডিজিটাল ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংক দিয়ে কোটি মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। আগামী জুলাইয়ে আমাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু হতে পারে। নগদ এমএফএস ও নগদ ডিজিটাল ব্যাংক হবে পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান।
নগদের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেউ বলেন ডাক বিভাগ মালিক। আসলে বিষয়টা কী?
তানভীর আহমেদ: নগদে কখনো ডাক বিভাগের মালিকানা ছিল না। ডাক বিভাগের ব্র্যান্ড ব্যবহার করছে নগদ। এ জন্য ডাক বিভাগের সঙ্গে ৫১ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগি করে নগদ। এটা অব্যাহত থাকবে। ভাতা বিতরণসহ সরকারের অর্থ বিতরণে নগদ অগ্রাধিকার পেয়েছে উন্নত প্রযুক্তির কারণে। আসলে সরকারি ভাতা বিতরণে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তা অন্যদের নেই। আবার আমাদের খরচও কম। আসলে নগদের সঙ্গে এই প্রতিযোগিতায় কেউ নেই। এই কারণে সরকার নগদকে বেছে নিয়েছে।
নগদ থেকেও গ্রাহক তথ্য যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তানভীর আহমেদ: আমাদের দেশে তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি নতুন। বেশ কিছুদিন আগে সরকারি একটি দপ্তর থেকে গ্রাহক তথ্য বেহাত হয়েছিল। পরে এসব তথ্য বিভিন্ন গ্রুপে অর্থের বিনিময়ে বেচাকেনা হয়। নগদ থেকে গ্রাহকের কোনো তথ্য বেহাত হওয়ার সুযোগ নেই। থেলাস নামে একটি কোম্পানি আমাদের তথ্য সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্রাহকের তথ্য মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, এসএমএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আছে। সবাই এসব তথ্য ভালো জায়গায় রাখতেও পারছে না। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির কাছে এসব তথ্য রাখতে হয়। এখন মনে হচ্ছে দেশের চেয়ে আমাজন বা সিঙ্গাপুরের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য রাখলে বেশি নিরাপদ থাকবে। এখন একজন সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় গ্রাহকের তথ্য রাখতে বছরে ১০০ টাকা খরচ হয়। বিদেশে রাখলে খরচ হবে ২ টাকা। এতে গ্রাহকের ওপর চাপ কমবে, প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো থাকবে। পাশাপাশি তথ্য সুরক্ষা নিয়ে বড় ধরনের কাজ করতে হবে।