আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি বা ঋণমাণ নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস রেটিংস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমানোর মাত্র দুই দিনের মাথায় দেশের ছয়টি বেসরকারি ব্যাংকের ঋণমান কমিয়েছে। সংস্থাটি গত বুধবার ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণমান কমিয়েছে।
এদিকে ছয় ব্যাংক নিয়ে মুডিসের পূর্বাভাসের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের অর্থনীতি একটি বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক ফল পেতে আরও সময় লাগবে। আর্থিক খাত সংস্কারের জন্য দেশীয় রাজনৈতিক সমর্থন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়াবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, ‘আমরা আশা করি, মুডিস শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের পর দেশের অর্থনীতির আরও ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করবে। তখন তারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করবে। ফলে তারা সরকারের নেওয়া নীতি ও উন্নয়নের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে।
মুডিস রেটিংস ব্র্যাক ব্র্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি (এলটি) স্থানীয় মুদ্রা (এলসি) ও বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) ডিপোজিট রেটিং বা আমানতের রেটিং ‘বি১’ থেকে ‘বি২’-এ নামিয়েছে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের এলটি এলসি (দীর্ঘমেয়াদি স্থানীয় মুদ্রা) এবং এফসি (বৈদেশিক মুদ্রা) ডিপোজিট রেটিং বা আমানতের রেটিং ‘বি২’ থেকে ‘বি৩’-এ নামিয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেটিং এজেন্সিটি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘বি২’ এলটি এলসি ও এফসি ডিপোজিট রেটিংও নিশ্চিত করেছে।
একই সময়ে মুডিস ছয়টি ব্যাংকের এলটি ডিপোজিট বা দীর্ঘমেয়াদি আমানতের রেটিং আউটলুক বা পূর্বাভাস পরিবর্তন করে স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে।
যোগাযোগ করা হলে ঋণমান কমানো হয়েছে, এমন একটি ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থাটি যেহেতু দেশেরই ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে, সেহেতু তারা যেসব ব্যাংক নিয়ে কাজ করে, সেগুলোরও ঋণমান কমিয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক হতে পারেন।
এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি রেটিং বা ঋণমান আবার কমিয়েছে মুডিস রেটিংস। সে ক্ষেত্রে সরকারের ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিংস ‘বি১’ থেকে ‘বি২’-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ঋণাত্মক’ করেছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে মুডিস। সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত ওই রেটিংস প্রতিবেদনে মুডিস জানায়, বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংস ‘নট প্রাইম’ বা শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন নয় হিসেবে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের একটি মুডিস। গত ৩১ মে প্রতিষ্ঠানটি শেষবার বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল। সেবার তারা ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বি৩ থেকে বি১-এ নামায়। এর কারণ হিসেবে মুডিস জানিয়েছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে।
মুডিস রেটিং এজেন্সি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের রেটিং বা ঋণমান দিয়ে আসছে। এর পর থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো সংস্থাটি তাদের পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ডাউনগ্রেড বা ঋণমান কমানো ও নেতিবাচক পূর্বাভাস দেওয়ার অর্থ হলো, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ঋণের খরচ বাড়তে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে এ রকম পরিস্থিতি দেখা গেলে আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়াটাও অধিকতর ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।
এদিকে আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিটি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে তাদের আগের পূর্বাভাসও সংশোধন করেছে। সংস্থাটির নতুন পূর্বাভাস হলো, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। আগের পূর্বাভাসে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। এ ছাড়া আগামী বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমকি ৮ শতাংশ হবে, যা ৬ শতাংশ হবে বলে আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল মুডিস।