নতুন সুদের হার অনুযায়ী বাড়তি কিস্তি কাটা শুরু করেছে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিছু প্রতিষ্ঠান এখন অপেক্ষা করছে পরিস্থিতি বুঝে ওঠার জন্য। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে। আর তা হলো বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। সুদহার নির্ধারণের নতুন নিয়ম হওয়ার পরও সরকারি এই প্রতিষ্ঠান একক অঙ্কের সুদে থাকার সিদ্ধান্তেই আছে।
জানা গেছে, ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণে বিএইচবিএফসি সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। কৃষকদের জন্য অবশ্য বিএইচবিএফসির ঋণের সুদহার আরও কম, মাত্র ৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সুদ কম এবং ঋণের সুদও সরল। অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ আদায় করে না প্রতিষ্ঠানটি। ঋণের সর্বনিম্ন মেয়াদ পাঁচ বছর, সর্বোচ্চ মেয়াদ ২৫ বছর।
জানতে চাইলে বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে চললেও সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষকে তাঁদের স্বপ্নের আবাসন নির্মাণে সহায়তা করা। এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যেখানে মুনাফা করার বিষয়টি মুখ্য নয়। এ জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুদহারে কোনো পরিবর্তন আপাতত আসছে না।’
বর্তমানে কোন পণ্যগুলোতে গ্রাহকের চাহিদা বেশি—এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে কর্মরত স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীদের স্বপ্নের গৃহনির্মাণে সহায়তার জন্য চলতি বছরের শুরুতে “স্বপ্ননীড়” নামে একটি পণ্য নিয়ে এসেছি। ওটা বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক বাড়ি নির্মাণ পণ্য “মনজিল” ভালো করছে। আমরা গ্রামের মানুষের কাছে এসব সেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। সব জেলা পর্যায়ে শাখা খোলা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ চলমান।’
বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজই হলো গৃহঋণ বিতরণ। পাশাপাশি সংস্থাটি ফ্ল্যাট নিবন্ধন, আবাসন উন্নয়ন ও মেরামত এবং বাড়ি নির্মাণে সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্যও ঋণ দিয়ে থাকে। বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে সাধারণত গ্রাহকের নিজের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা থাকতে হয়। অর্থাৎ এক কোটি টাকার প্রকল্পে ৭০ থেকে ৯০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয় বিএইচবিএফসি। বাকি ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা গ্রাহকের নিজের থাকতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে ঋণ অনুমোদন করাতে হয়। বিএইচবিএফসির ঋণের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরও রয়েছে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস সুবিধা। কাগজপত্র তৈরিতেও সহায়তা করে সংস্থাটি। সব বিভাগীয় শহর ছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় শাখা আছে সংস্থাটির।
প্রতিষ্ঠানটি বাড়ি নির্মাণ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ১২ ধরনের ঋণ দেয়। পণ্যগুলো হচ্ছে স্বপ্ননীড়, নগর বন্ধু, প্রবাস বন্ধু, পল্লীমা, কৃষক আবাসন ঋণ, আবাসন মেরামত, আবাসন উন্নয়ন, ফ্ল্যাট ঋণ, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ঋণ, হাউজিং ইকুইপমেন্ট ক্রয় ঋণ, সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ও ইসলামি শরিয়াভিত্তিক বাড়ি নির্মাণ বিনিয়োগ ‘মনজিল’।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি জুলাই মাস থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্মার্ট সুদহার নামে নতুন নিয়ম চালু করেছে। স্মার্ট হলো সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো আরও ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যোগ করতে পারবে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তা হবে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।
বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে নতুন এই নিয়মে সুদ নির্ধারণ করা শুরু করেছে। সুদহার নির্ধারণে এসব প্রতিষ্ঠান একেবারে সর্বোচ্চ সীমাকেই বেছে নিয়েছে। বাড়তি সুদহার আরোপ করে কিস্তিও কাটা শুরু হয়েছে। সুতরাং সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএইচবিএফসি থেকে ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ নিলে বাড়তি সুবিধা পাবেন গ্রাহকেরা।