আবারও নীতি সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাড়বে ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদ

বাংলাদেশ ব্যাংক
ছবি: সংগৃহীত

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে টাকার সরবরাহ কমানোর পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সব ধরনের নীতি সুদহার আবারও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে বাড়বে আমানতের সুদ ও ঋণের সুদহার।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়, নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত সোমবার (আজ) থেকে কার্যকর হবে। এর আগে সর্বশেষ গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনলাইনে অনুষ্ঠিত পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি কমিটির প্রথম সভায় নেওয়া নতুন চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। প্রথমত, রেপো রেট একবারে দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।

তাতে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে।

দ্বিতীয়ত, রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বা এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।

তৃতীয়ত, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সংকটে পড়া ব্যাংক উচ্চ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে।

চতুর্থত, স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলের সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এখন স্মার্ট রেট ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ব্যাংকগুলো এর সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করতে পারে। নতুন সিদ্ধান্তে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তাতে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের সুদ ও ঋণের সুদহার আরও বাড়বে।

এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ডলারের বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদার ও ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে।

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এত দিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।

দেশে তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।

সভায় নীতি সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে এবং ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া বর্তমানে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়।

সভায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নীতি পদক্ষেপ, বিশ্ববাজারে পণ্য মূল্যের নিম্নমুখী ধারা, আসন্ন আমন ধানের ভালো ফলন এবং শীতকালীন ফসলের সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি কমিটির প্রথম সভায় ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম; বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন প্রমুখ অংশ নেন।